Description of Jannah
জান্নাত
জান্নাত অর্থ হচ্ছে বাগান বা বাগান। সেখানে প্রবেশকারীরা যা চাইবে তাই পাবে। সেখানে তাঁরা নিজ
ইচ্ছায় চলাচল করতে পারবে। সেখানে তাঁরা কোন অসার শব্দ শুনতে পারবে না। জান্নাত থেকে
কাউকে বের করা হবে না। সারা জীবন
মুসলমানরা জান্নাতে প্রবশের চূড়ান্ত লক্ষ্যে আল্লাহর প্রতি ঈমান আনার এবং তাঁর সন্তুষ্টি অর্জন করার চেষ্টা করে। তারা আশা করে
যে, তাদের চিরন্তন
জীবন সেখানে কাটবে। অবশ্য, জান্নাত
কেমন হবে তা আমরা জানি না। একমাত্র
আল্লাহই ভাল জাননে, তবে কুরআনে জান্নাতের র্বণনা রয়েছে। জান্নাতে কেমন হবে
? অবশ্যই বেহেস্তের সর্বোশ্রেষ্ঠ প্রতিদান হচ্ছে আল্লাহর সন্তুষ্টি ও করুণা। এই সম্মান তাদের জন্য সংরক্ষতি হয়েছে যারা আল্লাহকে বিশ্বাস করে এবং তাঁর নির্দেশনা মেনে চলার চেষ্টা করে।
মহান আল্লাহ
বলেন; "বলুনঃ আমি কি তোমাদরেকে এর চেয়ে উত্তম জিনিষের সুসংবাদ দিব? যাহারা তাক্ওয়া অবলম্বন
করিয়া চলে তাহাদের জন্য তাহাদের প্রতিপালকের নিকট জান্নাত সমূহ রয়েছে, যাহার পাদদেশে
নদী প্রবাহিত । আর সেখানে তাহারা স্থায়ী হবে, তাহাদের জন্য পবিত্র সঙ্গিনীগণ এবং আল্লাহর নিকট হইতে সন্তুষ্টি রহিয়াছে। আল্লাহ
বান্দাদের সম্পর্কে সমক্য দ্রষ্টা" (৩: ১৫)।
আল্লাহ বলবেন , এই সেই দিন যেদিন সত্যবাদিগণ তাহাদের সত্যতার জন্য উপকৃত হইবে, তাহাদের জন্য আছে জান্নাত যাহার পাদদেশে নদী
প্রবাহিত। তাহারা সেখানে চিরস্থায়ী হইবে; আল্লাহ তাদের প্রতি প্রসন্ন এবং তাহারাও তাঁহার প্রতি সন্তুষ্ট; ইহা মহাসফলতা। "(৫: ১১৯)
শান্তির শুভেচ্ছা
যারা জান্নাতে প্রবশে করবে
তাদরেকে ফেরেশ্তাগন শান্তির বাণীতে অর্ভ্যথনা জানাবে। জান্নাতে তাঁহারা আরাম-আয়েশে থাকবে , সেখানে কোনো হিংষা-বিদ্বেষ
, ক্রোধ বা কোনো ধরনের বিপর্যয় থাকবে না।
"স্থায়ী
জান্নাত , উহাতে তাহারা প্রবেশ করিব এবং তাহাদের
পিতা-মাতা, পতি-পত্নী ও সন্তান-সন্ততিদের মধ্যে যাহারা সৎকর্ম করিয়াছে তাহারাও এবং
ফেরেস্তাগন তাহাদের নিকট উপস্থিত প্রত্যেক দ্বার দিয়া এবং বলিবে, তোমরা ধৈর্য্যধারণ
করিয়াছে বলিয়া তোমাদের প্রতি শান্তি; কত উত্তম
এই পরিনাম।" "সেখানে
তাহারা শুনিবে না কোন অসার অথবা পাপবক্য; সালাম আর সালাম বাণী ব্যতিত।" (১৩: ২৩-২৪ , ৫৬: ২৫-২৬)।
জান্নাতের সর্বধিক উল্লখেযোগ্য র্বণনা হ'ল একটি সুন্দর উদ্যান, সবুজ এবং প্রবাহিত জলে ভরা। প্রকৃতপক্ষে আরবী শব্দ, জান্নার র্অথ "উদ্যান"।
"যাহারা ঈমান আনায়ন করে ও সৎকর্ম করে তাহাদেরকে শুভ সংবাদ দাও যে, তাহাদের জন্য রহিয়াছে জান্নাত-যাহার নিম্নদেশে
নদী প্রবাহিত। যখনই তাহাদেরকে ফলমূল খাইতে দেওয়া হইবে তখনই তাহারা বলিবে , আমাদেরকে
পূর্বে জীবিকা রূপে যাহা দেওয়া হইত ইহা তো তাহাই; তাহাদরকে অনুরূপ ফলই দেওয়া হইবে এবং
সেখানে তাহাদের জন্য পবিত্র সঙ্গিনী রহিয়াছে, তাহারা সেখানে স্থায়ী হইবে।" (২:২৫)।
"তোমরা ধাবমান হও স্বীয় প্রতিপালকের ক্ষমার দিকে এবং সেই জান্নাতের দিকে যাহার বিস্তৃত
আসমান ও জমিনের ন্যায়, যাহা প্রস্তুত রাখা হইয়াছে মুত্তাকীদের জন্য" (৩: ১৩৩)
"আল্লাহ তায়ালা মু’মিন
নর ও মু’মিন নারীকে প্রতিআশ্রুতি দিয়াছেন জান্নাতের যাহার নিম্নদেশে নদী প্রবাহিত,
যেখানে তাহারা স্থায়ী হইবে এবং স্থায়ী জান্নাতে
উত্তম বাসস্থানের । আল্লাহর সন্তুষ্টিই সর্বশ্রেষ্ঠ এবং উহাই মহাসাফল্য" (৯: ৭২)।
পরিবার/সঙ্গী
পুরুষ এবং মহিলা উভয়ইকে জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে এবং অনেক পরবিার আবার মলিতি হবে।
”অতঃপর
তাহাদের প্রতিপালক তাহাদের ডাকে সাড়া দিয়ে
বলেন, আমি তোমাদের মধ্যে কর্ম নিষ্ঠ কোন নর অথবা নারীর কর্ম বিফল করি না, তোমরা একে
অপরের অংশ।” (৩: ১৯৫)।
"স্থায়ী
জান্নাত , উহাতে তাহারা প্রবেশ করিব এবং তাহাদের
পিতা-মাতা, পতি-পত্নী ও সন্তান-সন্ততিদের মধ্যে যাহারা সৎকর্ম করিয়াছে তাহারাও এবং
ফেরেস্তাগন তাহাদের নিকট উপস্থিত প্রত্যেক দ্বারা দিয়া এবং বলিবে, তোমরা ধৈর্য্যধারণ
করিয়াছেঅ বলিয়া তোমাদের প্রতি শান্তি; কত উত্তম
এই পরিনাম।" (১৩: ২৩-২৪)
"আর কেহ আল্লাহ এবং রাসুলের আনুগত্য করিলে সে নবী, সত্যনিষ্ঠ, শহীদ ও সৎকর্মপরায়ণ-
যাহাদের প্রতি আল্লাহ অনুগ্রহ করিয়াছেন তাহাদের সঙ্গী হইবে এবং তাহারা কত উত্তম সঙ্গী!"(৪:৬৯)
সম্মানের সিংহাসন
জান্নাতে প্রতিটি অবস্থান হবে স্বাচ্ছন্দের
অবস্থান । মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন-
” তাহারা বসিবে শ্রেণীবদ্ধ ভাবে
সজ্জিত আসনে হেলান দিয়া , আমি তাহাদের মিলন ঘটাইব আয়াতলোচনা হূরের সঙ্গে” (৫২:২০)"অনেক মুখমন্ডল সেই দিন হইবে আনন্দোজ্জ্বল, নিজেদের কর্ম-সাফল্যে পরিতৃপ্ত, সুমহান জান্নাতে-
সেখানে তাহারা অসার বাক্য শুনিবে না, সেখানে
থাকিবে বহমান প্রস্রবণ, উন্নত মর্যাদা সম্পন্ন শয্যা, প্রস্তত থঅকিবে পানপাত্র,সারি
সারি উপাধান এবং বিছানা গালিচা। "(৮৮: ৮–১৬)
খাদ্য ও পানীয়
”যাহারা ঈমান আনায়ন করে এবং সৎকর্ম করে তাদেরকে
শুভ সংবাদ দাও যে, তাহাদের জন্য রহিয়াছে জান্নাত , যাহার নিম্নদেশে নদী প্রবাহিত। যখনই
তাদেরকে ফলমূল খাইতে দেওয়া হইবে তখনই তাহারা বলিবে , আমাদেরকে পূর্বে জীাবকা রূপে যাহা
দেওয়া হইত ইহা তো তাহাই, তাহাদেরকে অনুরূপ ফলই দেওয়া হইবে এবং
সেখানে তাহাদের জন্য পবিত্র সুঙ্গনী রহিয়াছে, তাহারা সেখানে স্থায়ী হইবে।”(২:২৫)।
"আমরাই তোমাদের বন্ধু দুনিয়ার জীবনে ও আখিরাতে। সেখানে তোমাদের জন্য রহিয়াছে যাহা
কিছু তোমাদের মন চায় এবং সেখানে তোমাদের জন্য রহিয়াছে যাহা তোমরা ফর্মায়েশ কর। ইহা
ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু আল্লাহর পক্ষ হইতে আপ্যায়ন।”(৪১: ৩১-৩২)
"তাহাদের বলা হইবে , পানাহার কর তৃপ্তির সঙ্গে, তোমরা অতীত দিনে যাহা করিয়াছিলে
তাহার বিনিময়ে!” (৬৯:২৪)।
“মুত্তাকিদেরকে যে জান্নাতের প্রতিশ্রতি
দেওয়া হেইয়াছে তাহার দৃষ্টান্ত: উহাতে আছে নির্মল পানির নহর,আছে দুধের নহর যাহার
স্বাধ অপরিবর্তনীয়, আছে পানকারীদের জন্য সুস্বাদু সুরার নহর, আছে পরিশোধিত মধুর নহর,
এবং সেখানে উহাদের জন্য থাকিবে বিবিধ ফলমূল আর তাহাদের প্রতিপালকের পক্ষ হইতে ক্ষমা। মুত্তাকিরা কি তাহাদের ন্যায়, যাহারা জাহান্নামে স্থায়ী হইবে যাদেরকে পানি পান করতে দেওয়া হইবে ফুটন্ত পানি
যাহা উহাদের নাড়িভুড়ি ছিন্ন-বিছিন্ন করিয়া
দিবে?”( ৪৭:১৫)
চিরন্তন অবস্থান
ইসলামে জান্নাতকে চির স্থায়ী আবাসস্থল হিসবে ঘোষণা করা
হয়েছে। মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন-
”ইহা সেই কিতাব; ইহাতে কোন সন্দেহ নাই, মুত্তাকীদের জন্য ইহা
পথ-নির্দেশ। যাহারা অদৃশ্যে ঈমান আনে, সালাত
কায়েম করে ও তাহাদেরকে যে জীবন উপকরন দেওয়া হয়েছে তাহা হইতে ব্যয় করে। এবং তোমার প্রতি
যাহা নাযিল হইয়াছে ও তোমার পূর্বে যাহা নাযিল করা হয়েছে তাহাতে যাহারা ঈমান আনে ও আখিরাতের
প্রতি নিশ্চিত বিশ্বাসী। তাহারাই তাদের প্রতিপালক- নির্দেশিত পথে রহিয়াছে এবং তাহারাই
সফলকাম। ( এখানে সফলকাম বলতে জান্নাতকে বুঝানো হয়েছে ) ” (২:২-৫)।
"উহারাই তাহারা , যাহাদের
পুরস্কার তাহাদের প্রতিপালকের ক্ষমা এবং জান্নাত , যাহার পাদদেশে নদী প্রবাহিত, সেখানে
তাহারা স্থায়ী হইবে এবং সৎকর্মশীলদের পুরস্কার কত উত্তম!" (৩: ১৩৬)।
এই দিন জান্নাতবাসিগন আনন্দে মগ্ন থাকিবে,
তাহারা এবং তাহাদের স্ত্রীগণ সুশীতল ছায়ায় সুসজ্জিত আসনে হেলান দিয়া বসিবে, সেখানে
থাকিবে তাহাদের জন্য ফলমূল এবং তাহাদের জন্য বাঞ্ছিত সমস্ত কিছু, সালাম , পরম দয়ালু
প্রতিপালকের পক্ষ হইতে সম্ভাষণ। (৩৬:৫৫-৫৮)
পরিশেষে
বলা যায়, জান্নাত তাহাদের জন্য যাহারা আল্লাহর প্রতি ঈমান আনিবে এবং সৎকর্ম করিবে।
আমাদের সর্বদা মহান আল্লাহর উপর ভরসা করতে হবে। আল্লাহ ব্যতীত অন্য
কারো উপর ভরসা করা যাবে না। সকল প্রকার পাপ
কাজ থেকে বেঁচে থাকার চেষ্টা করতে হবে। যদি আমাদের মনের অজান্তে কোন পাপ কাজ হয়ে যায়,
তবে সাথে সাথে আল্লহর কাছে ক্ষমা চাইতে হবে। মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সঃ) এবং সাহাবী
(রাঃ) যেভাবে আমল করেছেন আমাদেরকে সেভাবেই আমল করতে হবে। আমরা যে আমল করব তাহার
দলিল সঠিকভাবে যাচাই- বাচাই করতে হবে।
ভুল-ত্রুটি সংশোধনযোগ্য।
ধন্যবাদ।
0 Comments