সূরা আত ত্বরিক্ব, আল ক্বলম, আল ক্বরিয়া, আল জিলজাল, আল ক্বদর এবং সূরা আল বায়্যিনাহ বাংলা অর্থ।
সূরা আত ত্বরিক্ব
১. শপথ আকাশের এবং রাত্রিতে যাহা আর্বিভূত হয় তাহার।
২. তুমি কি জান রাত্রিতে যাহা
আবিভর্‚ত হয় উহা কি?
৩. উহা উজ্জ্বল নক্ষত্র।
৪. প্রত্যেক জীবের উপরই তত্তাবধায়ক
রহিয়াছে।
৫. সুতরাং মানুষ প্রণিধান করুক কী
হইতে তাহাকে সৃষ্টি করা হইয়াছে!
৬. তাহাকে সৃষ্টি করা হইয়াছে সবেগে
স্খলিত পানি হইতে,
৭. ইহা নির্গত হয় মেরুদন্ড ও
পঞ্জরাস্থিত মধ্য হইতে।
৮. নিশ্চয়ই তিনি তাহার প্রত্যানয়নে
ক্ষমতাবান।
৯. যেই দিন গোপন বিষয় পরীক্ষিত হইবে।
১০. সেইদিন তাহার কোন সামর্থ্য থাকিবে
না এবং সাহায্যকারীও নয়।
সূরা আল ক্বলম
১. নূন- শপথ কলমের এবং উহারা যাহা লিপিদ্ধ করে তাহার,
২. তোমার প্রতিপালকের অনুগ্রহে তুমি উন্মাদ নও।
৩. তোমার জন্য অবশ্যই রহিয়াছে নিরবিচ্ছিন্ন পুরুস্কার,
৪. তুমি অবশ্যই মহান চরিত্রে অধিষ্ঠিত।
৫. শীঘ্রই তুমি দেখিবে এবং উহারাও দেখিবে-
৬. তোমাদের মধ্যে কে বিকারগ্রস্ত।
৭. তোমার প্রতিপালক তো সম্যক অবগত আছেন কে তাঁহার পথ হইতে বিচ্যুত হইয়াছে এবং তিনি সম্যক অবগত জানেন তাহাদেরকে, যাহারা সৎপথপ্রাপ্ত।
৮. সুতরাং তুমি মিথ্যাচারীদের অনুসরণ করিও না।
৯. উহারা চায় যে, তুমি নমনীয় হও,তাহা হইলে উহারাও নমনীয় হইবে,
১০. এবং অনুসরণ করিও না তাহার, যে কথায় কথায় শপথ করে, যে লাঞ্ছিত,
১১. পশ্চাতে নিন্দাকারী, যে একের কথা অপরের নিকট লাগাইয়া বেড়ায়,
১২. যে কল্যাণের কার্যে বাধা দান করে, যে সীমালংঘনকারী,পাপিষ্ঠ,
১৩. রূঢ় স্বভাব, তদুপরি কুখ্যাত,
১৪. এইকজন্য যে , সে ধন-সম্পদ এবং সন্তান-সন্ততিতে সমৃদ্ধিশালী।
১৫. উহার নিকট আমার আয়াত সমূহ আবৃত্তি করা হইলে সে বলে, ইহা তো সেকালের উপকথা মাত্র।
১৬. আমি উহার শুঁড় দাগাইয়া দিব।
১৭. আমি উহাদেরকে পরীক্ষা করিয়াছি, যেভাবে পরীক্ষা করিয়াছিলাম উদ্যান-অধিপতিগনকে, যখন উহারা শপথ করিয়াছিল যে , উহারা প্রত্যুষে আহরণ করিবে বাগানের ফল।
১৮. এবং তাহারা ’ইনশাআল্লাহ্’ বলে নাই্
১৯. অতঃপর তোমার প্রতিপালকের নিকট হইতে এক বিপর্যয় হানা দিল সেই উদ্যানে , যখন উহারা ছিল নিদ্রিত।
২০. ফলে উহা দগ্ধ হইয়া কৃষ্ণবর্ণ ধারণ করিল।
২১. প্রত্যুষে উহারা একে অপরকে ডাকিয়া বলিল,
২২. ’তোমরা যদি ফল আহরণ করিতে চাও তবে সকাল সকাল বাগানে চল।’
২৩. অতঃপর উহারা চলিল নিঃস্বরে কথা বলিতে বলিতে,
২৪. অদ্য যেন তোমাদের নিকটে কোন অভাবগ্রস্ত ব্যক্তি প্রবেশ করিতে না পারে।
২৫. অতঃপর উহারা নিবৃত্ত করিতে সক্ষম-এই বিশ্বাস লইয়া প্রভাতকালে বাগানে যাত্রা করিল।
২৬. অতঃপর উদারা যখন বাগানের অবস্থা প্রত্যক্ষ করিল, তখন বলিল, আমরা তো দিশা হারাইয়া ফেলিয়াছি।
২৭. বরং আমরা তো বঞ্চিত।
২৮. উহাদের শ্রেষ্ঠ ব্যক্তি বলিল, আমি কি তোমাদেরকে বলি নাই? এখনও তোমরা আল্লাহর পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করিতেছ না কেন?
২৯. তখন উহারা বলিল, আমরা আমাদের প্রতিপালকের পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করিতেছি, আমরা তো সীমালংঘনকারী ছিলাম।’
৩০. অতঃপর উহারা একে অপরের প্রতি দোষারোপ করিতে লাগিল।
৩১. উহারা বলিল, ’হায়, আমাদের দুর্ভোগ! আমরা তো ছিলাম সীমালংঘনকারী।’
৩২. সম্ভবত আমাদের প্রতিপালক ইহা হইতে আমাদেরকে উৎকৃষ্টতর বিনিময় দিবেন, আমরা আমাদের প্রতিপালকের অভিমুখী হইলাম।’
৩৩. শাস্তি এইরূপই হইয়া থাকে এবং আখিরাতের শাস্তি কঠিনতর। যদি উহারা জানিত।
৩৪. মুত্তাকীদের জন্য অবশ্যই রহিয়াছে ভোগ-বিলাসপূর্ণ জান্নাত তাহাদের প্রতিপালকের নিকট।
৩৫. আমি কি আতœসমর্পণকারীদেরকে অপরাধীদের সমতুল্য গণ্য করিব?
৩৬. তোমাদের কী হইয়াছে, তোমরা এ কেমন সিদ্ধান্ত দিতেছ?
৩৭. তোমদের নিকট কী কোন কিতাব আছে যাহাতে তোমরা অধ্যয়ন কর-
৩৮. যে , তোমাদের জন্য উহাতে রহিয়াছে যাহা তোমরা পছন্দ কর?
৩৯. তোমাদের কি আমার সঙ্গে কিয়ামত পযর্ন্ত বলবৎ এমন কোন অঙ্গীকার রহিয়াছে যে, তোমরা নিজেদের জন্য যাহা স্থির করিবে তাহাই পাইবে?
৪০. তুমি উহাদেরকে জিজ্ঞেস কর উহদের মধ্যে এই দাবির যিম্মাদার কে?
৪১. উহাদের কি কোন দেব-দেবী আছে? থাকিলে উহাদের দেব-দেবীগুলিকে উপস্থিত করুক-যদি উহারা সত্যবাদী হয়।
৪২. স্মরণ কর সেই দিনের কথা, যেদিন পায়ের গোছা উন্মোচিত করা হইবে, সেই দিন উহাদেরকে আহবান করা হইবে সিজদা করিবার জন্য কিন্তু উহারা সক্ষম হইবে না।
৪৩. উহাদের দৃষ্টি অবনত, হীনতা উহাদেরকে আচ্ছন্ন করিবে অথচ যখন উহারা নিরাপদ ছিল তখন তো উহাদেরকে আহবান করা হইয়াছিল সিজদা করিতে।
৪৪. ছাড়িয়া দাও আমাকে এবং যাহারা এই বাণীকে প্রত্যাখান করে তাহাদেরকে, আমি উহাদেরকে ক্রমে ক্রমে ধরিব এমনভাবে যে, উহারা জানিতে পারিবে না।
৪৫. আর আমি উহাদেরকে সময় দিয়া থাকি,নিশ্চয়ই আমার কৌশল অত্যন্ত বলিষ্ঠ।
৪৬. তুমি কি উহাদের নিকট পারিশ্রমিক চাহিতেছো যে, তাহা উহাদের কাছে দুর্বহ দন্ড মনে হয়?
৪৭. উহাদের কি অদৃশ্যের জ্ঞান আছে যে, উহারা তাহা লিখিয়া রাখে?
৪৮. অতএব, তুমি ধৈর্য ধারণ কর তোমার প্রতিপালকের নির্দেশের অপেক্ষায় , তুমি মৎস-সহচরের ন্যায় অধৈর্য হইও না , সে বিষাদ আচ্ছন্ন অবস্থায় কাতর প্রার্থনা করিয়াছিল।
৪৯. তাঁহার প্রতিপালকের অনুগ্রহ তাঁহার নিকট না পৌঁছালে সে লাঞ্ছিত হইয়া নিক্ষিপ্ত হইত উন্মুক্ত প্রান্তরে।
৫০. পুনরায় তাঁহার প্রতিপালক তাঁহাকে মনোনীত করিলেন এবং তাঁহাকে সৎকর্মপরায়ণদের অন্তর্ভুক্ত করিলেন।
৫১.কাফিররা যখন কুরআন শ্রবণ করে তখন উহারা যেন উহাদের তীক্ষ্ণ দৃষ্টি দ্বারা তোমাকে আছড়াইয়া ফেলিবে এবং বলে , ’এ তো এক পাগল!’
৫২. কুরআন তো বিশ্বজগতের জন্য উপদেশ।
সূরা আল ক্বরিয়া
১। মহাপ্রলয়,
২। মহাপ্রলয় কী?
৩। মহাপ্রলয় সম্বন্ধে তুমি
কী জান?
৪। সেই দিন মানুষ হইবে
বিক্ষিপ্ত পতংগের মত
৫। এবং পর্বতসমূহ হইবে
ধূনিত রংগিন পশমের মত।
৬। তখন যাহার পাল্লা ভারী
হইবে
৭। সে তো লাভ করিবে
সন্তোষজনক জীবন।
৮। কিন্তু যাহার পাল্লা
হালকা হইবে
৯। তাহার স্থান হইবে
‘হাবিয়া'।
১০। তুমি কি জান উহা কী?
১১। উহা অতি উত্তপ্ত
অগ্নি।
সূরা আল জিলজাল
১. পৃথিবী যখন আপন কম্পনে প্রবলভাবে প্রকম্পিত হইবে,
২. এবং পৃথিবী যখন তাহার ভার বাহির করিয়া দিবে,
৩. এবং মানুষ বলিবে,ইহার কী হইল?'
৪. সেই দিন পৃথিবী তাহার বৃত্তান্ত বর্ণনা করিবে,
৫. কারণ তোমার প্রতিপালক তাহাকে আদেশ করিবেন,
৬. সেই দিন মানুষ ভিন্ন ভিন্ন দলে বাহির হইবে,যাহাতে
উহাদেরকে উহাদের কৃতকর্ম দেখান যায়,
৭. কেহ অণু পরিমাণ সৎকর্ম করিলে সে তাহা দেখিবে
৮. এবং কেহ অণু পরিমাণ অসৎকর্ম করিলে
সে তাহাও
দেখিবে।
সূরা আল ক্বদর
১.নিশ্চয় আমি
কুরআন অবতীর্ণ করিয়াছি মহিমানি¦ত রজনীতে;
২. আর মহিমানি¦ত রজনী সম্বন্ধে তুমি কী
জান?
৩.মহিমানি¦ত রজনী সহস্র মাস অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ।
৪. সেই রাত্রিতে ফিরিশতাগণ ও রূহ্ অবতীর্ণ হয়
প্রত্যেক কাজে তাহাদের প্রতিপালকের অনুমতিক্রমে।
৫. শান্তিই শান্তি, সেই রজনী ঊষার আবির্ভাব পর্যন্ত।
সূরা আল বায়্যিনাহ
১. কিতাবীদের মধ্যে যাহারা কুফরী করিয়াছিল তাহারা
এবং মুশরিকরা আপন মতে অবিচলিত ছিল যে পর্যন্ত না তাহাদের নিকট সুস্পষ্ট প্রমান
আসিল-
২. আল্লাহর নিকট হইতে এক রসূল, যে আবৃত্তি করে পকিত্র গ্রন্থ,
৩. যাহাতে আছে সঠিক বিধান।
৪. যাহাদের কিতাব দেয়া হয়েছিল তাহারা তো বিভক্ত হইল
তাহাদের নিকট সুস্পষ্ট প্রমাণ আসার পর।
৫. তাহারা তো আদিষ্ট হইয়াছিল আল্লাহর আনুগত্যে
বিশুদ্ধ চিত্ত হইয়া একনিষ্ঠ ভাবে তাঁহার ইবাদত করিত এবং সালাত কায়েম করিতে ও যাকাত
দিতে,
ইহাই সঠিক দীন।
৬. কিতাবীদের মধ্যে যাহারা কুফরী করে তাহারা এবং
মুশরিকরা জাহান্নামের অগ্নিতে স্থায়ীভাবে অবস্থান করিবে; উহারাই সৃষ্টির অধম।
৭. যাহারা ঈমান আনে এবং সৎকর্ম করে, তাহারাই সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ।
৮. তাহাদের প্রতিপালকের নিকট আছে তাহাদের
পুরস্কার-স্থায়ী জান্নাত, যাহার নি¤œদেশে নদী প্রবাহিত, সেখানে তারা চিরস্থায়ী
হইবে। আল্লাহ্ তাহাদের প্রতি প্রসন্ন এবং তাহারাও তাঁহাদতে সন্তুষ্ট। ইহা তাহার
জন্য,
যে তাহাদের প্রতিপালকে ভয় করে।
0 Comments