বিশ্ব নবী হযরত মুহাম্মদ (সঃ) এর নসবনামা

হযরত মুহাম্মদ (সঃ) এর পবিত্র নসবনামা

আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘তোমাদের মধ্যে থেকেই তোমাদের নিকট একজন রাসূল আগমন করেছেন’-(তাওবা=128)

হযরত আনাস থেকে বর্ণিত, রসুল (সঃ) বলেন-বংশ লতিকার দিক দিয়ে আমি তোমাদের থেকে উত্তম ও সম্ভ্রান্ত। আমার পূর্বপুরুষদের মধ্যে আদম (আঃ) থেকে শুরু করে এ পর্যন্ত কোন ‍যিনা নেই, বরং সবাই বিবাহিত।

 

হযরত আদম (আঃ) থেকে শুরু করে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সঃ) এর পিতা-মাতা পর্যন্ত বংশপরম্পরায় পিতামহ, প্রতিমহ কিংবা মাতামহী পর্যায়ক্রমিকভাবে প্রত্যেকেই সৎ ও সাধবী তথা নেককার  এবং পবিত্র ছিলেন, ব্যভিচারের দ্বারা কেউ কখনই কলঙ্কিত হননি।

 

সৎকর্মশীল বান্দা, যাঁদেরকে মহান আল্লাহ তায়ালা নবুয়াত ও রিসালাতের জন্য নির্বাচন করেন, তাঁদের বংশপরম্পরা এমনটিই  পবিত্র হয়ে থাকে। আল্লাহ তায়ালা সবসময় পবিত্র পুরুষের মাধ্যমে পবিত্র নারীর গর্ভে তাঁদেরকে প্রেরণ করেন। নির্বাচিত ও মনোনীতরূপে আল্লাহ তায়াল যাঁকে গ্রহন করবেন, সৃষ্টির পূর্বে তাঁর বংশকে নির্বাচিত করবেন, খাঁটি ও নির্মল করবেন, করবেন সর্বোত্তম নিষ্কলুষ। নবূওয়াত ও রিসালাতের জন্য আল্লাহ তায়ালার নির্বাচিত ও মনোনীত বান্দাদের যে বিষয়ে যে সীমা পর্যন্ত সম্পর্কযুক্ত হতে পারে, সে চূড়ান্ত পর্যায় পর্যন্ত নির্বাচন ও মনোনয়নের জন্য পছন্দ করা হয়ে থাকে।

 

 

মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সঃ)  কে হেয় এবং ইসলামের অগ্রগতি ব্যাহত করার জন্য মুনাফিকরা যখন উম্মুল মুমিনীন হযরত আয়েশা (রাঃ) এর প্রতি অপবাদ আরোপ করেছিল,  তখন স্বয়ং আল্লাহ রব্বুল আলামীন সিদ্দীক কন্যা সিদ্দীকার শানে সূরা নূরের দশটি আয়াত নাযিল করেছেন, যার মধ্যে এও ছিল : মহানবী (স:) ও মুসলিম সৈনিকেরা এক রণাঙ্গণ থেকে সওয়ারীসহ ফিরে আসার সময় হযরত আয়েশা (রাঃ) কে সঙ্গে আনতে ভুলে যান। তিনি প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে যাওয়ার ফাঁকে কাফেলা রওয়ানা দিয়ে চলে আসে। পথিমধ্যে স্মরণ হলে পরে গিয়ে তাঁকে নিয়ে আসা হয়। এতেই মুনাফিকরা কথা রটনা করতে থাকে।

 

মহান আল্লাহ বলেন- “আর তোমরা যখন এটা শুনলে,তখন কেন বললে না যে, সুবাহানাল্লাহ! এটা এক কঠিন অপবাদ।” এ বিষয়ে আমরা মন্তব্য করতে পারি না। অর্থাৎ হে মুসলমানগণ! এ ঘটনা শোনামাত্রই তোমাদের বলা উচিত ছিল, সমস্ত পবিত্রতা আল্লাহর, এতো চরম অপবাদ! এ ধরনের কল্পনা থেকেও আল্লাহর আশ্রয় কামনা করি, পয়গাম্বরের স্ত্রী কিরূপে পাপিষ্ঠা হতে পারেন! তাঁরা তো নেককার ও পবিত্রই হবেন।

 

হযরত মুনযির হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন  “কোন পয়গম্বরের স্ত্রী কখনই ব্যভিচার করেন নি”

ইবন জুরায়জ বলেন, নুবওয়াতের মর্যাদা  ও সম্মানার বৈশিষ্ট্যই এটা নয় যে, কোন নবীর পাপ কাজে লিপ্ত হবেন। ইবন আসাকির আশরাজ খুরাসানি থেকে মরফু রিওয়াত করেন যে, নবী করিম (সঃ) ইরশাদ করেছেনঃ কোন পয়গম্বরের স্ত্রী কখনই ব্যভিচার করেন নি। যখন পয়গম্বগণের স্ত্রীর পক্ষে পাপাচারী হওয়া নবুওয়াতের মর্যদার পরিপন্থী, তখন তাঁদের মাতা-মাতামহী প্রমুখ নারীগনেরও পাপাচারী হওয়া নবুওয়াত মর্যাদার পরিপন্থি। কারন, সন্তানের জন্য পিতৃ আওতা থেকে মাতৃ কর্তৃক অধিক শক্তিশালী হয়ে থাকে। কাজেই নবীগনের জন্ম ও  লালন-পালন ( আল্লাহ মাফ করুক ) কোন দুষ্কর্মে কলুষিত কোন পরিবারে হওয়া অসম্ভব।

 

হযরত আদম (আঃ) থেকে শুরু করে সর্বোশেষ নবী হযরত মুহাম্মদ (সঃ) পর্যন্ত যত নবী-রাসুল গত হয়েছেন, কারো বংশ সম্বন্ধেই কোন সমালোচনা কোন কথা বলতে পারেননি। কেবল ইয়াহুদীরা                  ( ল’নাতুল্লাহ আলাইহিম ) মহান আল্লাহর অতুলনীয় ক্ষমতার ‍নিদর্শন ঈসা (আঃ) এর সতী-সাধবী মাতা মরিয়ম (আঃ)  এর উপর অপবাদ আরোপ করেছে। মহান আল্লাহ তায়ালা স্বীয় কিতাবে স্বপ্রশংস ভাষায় হযরত মরিয়ম (আঃ) এর প্রসঙ্গে এবং  হযরত ঈসা ( আঃ ) এর গৌরবময় জন্ম সম্পর্কে বর্ণনা দিয়েছেন এবং সেই সাথে ইয়াহুদীদের প্রতি অভিসম্পাত বর্ষণ করেছেন। যা দ্বারা পরিষ্কারভাবে প্রকাশ পেল, মহান আল্লাহ কর্তৃক নির্বাচিত ও প্রেরিত কোনো পয়গাম্বরের বংশধারায় এক মুর্হূতের জন্যও কোন সন্দেহ সংশয় প্রকাশ করার অবকাশ কোন খবিসের জন্য রাখা হয়নি। রোমের সম্রাট যখন আবু সুফিয়ানের নিকট মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সঃ) এর বংশ সম্বন্ধে প্রশ্ন করলেন : “তোমাদের মধ্যে তাঁর বংশ মর্যাদা কিরূপ” আবু সুফিয়ান জবাব দিলেন, “তিনি আমাদের মধ্যে সম্ভ্রান্ত বংশীয়।

 

হাফিয আসকালানী বলেন, বাযযার এর বর্ণনায় এরূপ রয়েছে: “অর্থাৎ বংশ মর্যাদা এবং খান্দানের দিক দিয়ে কেউ তাঁর চেয়ে উর্ধ্বে নয়” রোম সম্রাট বলেন, এটাও একটা নিদর্শন, “অর্থাৎ নবী হওয়ার অন্যতম নিদর্শন এটাও যে, মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সঃ) এর খান্দান সবচেয়ে সম্ভ্রান্ত ছিল। সহীহ বোখারীর রিওয়ায়াতে এ বাক্য রয়েছে যে, আবু সুফিয়ানের জবাব শুনে সম্রাট বললেন: “অর্থাৎ পয়গাম্বরগন সর্বদা সম্ভ্রান্ত বংশেরই হয়ে থাকেন।”

 

            পিতার দিক থেকে বংশ লতিকা

 

আমাদের নবী আকরাম মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সঃ) এর বংশ লতিকা, যা সারা বিশ্বের সম্ভ্রান্ত বংশ লতিকা থেকে উন্নত, অগ্রগামী এবং সবচেয়ে উত্তম ও শ্রেষ্ঠ। তা এরূপ: সাইয়্যেদুনা মাওলানা মুহাম্মদ ইবন আবদিল্লাহ ইবন আব্দুল মুত্তালিব ইবন হাশিম ইবন আবদে মানাফ ইবন কুসাই ইবন কিলাব ইবন মুররা ইবন কা’বা ইবন লুআই ইবন গলিব ইবন ফিহর ইবন মালিক ইবন নাযর ইবন কিনানা ইবন খুযায়মা ইবন

মুদরিকা ইবন ইলিয়ায ইবন মুযার ইবন নিযার ইবন মা’আদ ইবন আদনান। [বুখারী শরীফ, বাবু মাবআসুন নবী (সঃ)]

হাফিয আসকালানী  বলেন, ইমাম বুখারী স্বীয় জামে সহীহতে এ পবিত্র বংশ পরম্পরা কেবল আদনান পর্যন্ত উল্লেখ করেছেন কিন্তু স্বীয় ইতিহাস গ্রন্থে হযরত ইবরাহীম ( আঃ ) পর্যন্ত বর্ণনা করেছেন যা নিম্নরূপঃ-আদনান ইবন আদু ইবন মুকাওইন ইবন তারিহ ইবন ইয়াশজাব ইবন ইয়ারাব ইবন সাবিত ইবন ইসমাইল ইবন ইবরাহীম ( আঃ )।  

 

আদনান পর্যন্ত বংশ পরম্পরা সকল বংশ বিশেষজ্ঞের নিকট গ্রহনযাগ্য। এতে কারো মতপার্থক্য নেই এবং আদনানের পূর্বপুরুষ ইসমাইল (আঃ) এর বংশধর হওয়াটাও সবার নিকট গ্রহনযোগ্য।

 

মাতার দিক থেকে বংশ লতিকা

উপরে যে বংশ লতিকা বর্ণনা করা হয়েছে তা ছিল পিতা এবং দাদার দিক থেকে। তাঁহার মাতার দিক থেকে বংশ লতিকা এরূপ: মুহাম্মদ (সঃ) ইবন আমিনা বিনতে ওহাব ইবনে মানাফ ইবন যুহরা ইবন কিলাব ইবন কিলাব।  কিলার পর্যন্ত পৌঁছে পিতা ও মাতা উভয়ের বংশ লতিকা একত্রিত হয়ে যায়।

যদি এখানে বংশ লতিকার পিতা-পিতামহের কয়েকজনের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা তুলে ধরা হয়, তা হলে সম্ভবত তা অপ্রাসঙ্গিক হবে না।

আদানানঃ কায়দার ইবনে ইসমাঈল (আঃ) এর বংশধর। আবূ জাফর ইবন হাবীব স্বীয় তারীখ গ্রন্থে বর্ণনা করেন, হযরত ইবন আব্বাস (রাঃ) বলতেন যে, আদনান, রবীয়াহ, খুযাইমা, আসাদ এসব গোত্র ইবরাহীম (আঃ) এর বংশোদ্ভুত, কল্যানকর ও উত্তমভাবে এদের উল্লেখ কর। এদেরকে মন্দ বলো না, এরা ইসলামের উপর ছিল।

 

মা’আদঃ মীম অক্ষরে যবর এবং দাল আক্ষরে তাশদীদ দিয়ে উচ্চারণ হবে। কেউ কেউ বলেন, মা’আদ ইনসাফ অর্থাৎ বিপর্যয়ের সাথে সম্পর্কযুক্ত। ‍যিনি খুব বাহাদুর এবং যোদ্ধা ছিলেন, সারা জীবন বণী ইসরাঈলের সঙ্গে যুদ্ধ এবং সংঘাত কেটেছে।  প্রতিটি যুদ্ধে জয়ী এবং সাহায্যপ্রাপ্ত ছিলেন। তাঁর উপনাম ছিল আবূ নাযযার। ইমাম তাবারী বলেন, মা’আদ ইবন আদনান বুখত নাসর এর সময়ে দ্বাদশ বর্ষীয় বালক ছিলেন। তৎকালীন পয়গাম্বর আরমিয়া ইবন হালকিয়ার প্রতি আল্লাহর পক্ষ থেকে এ মর্মে ওহী নাযিল হয় যে, বুখত নাসরকে জানিয়ে দাও, আমি তাকে আরবের শসনকর্তা মনোনিত করেছি এবং তুমি মা’আদ ইবন আদনানকে স্বীয় বোরাকে আরোহন করাও যাতে সে কোন ব্যাথা না পায়।

 

নিযারঃ ‍নিযার শব্দটি ‘নযর’ থেকে গৃহীত, যার অর্থ হল স্বল্প ( বিরল ) আবুল ফারজ বলেন, নিযার যেহেতু সমকালীন যুগে একক ব্যক্তিত্ব ছিলেন অর্থাৎ তাঁর সমকক্ষ খুব কমই ছিল, এজন্যই তাঁর নাম নিযার হয়েছে। আর কারো মতে ‍নিযার অর্থ কৃশ ও রোগা-পাতলা। যেহেতু তিনি কৃশ ও রোগা-পাতলা ছিলেন,  এজন্য তাঁর নাম নিযার ছিল। মদীনা মুনাওয়ারা এর সন্নিকটে যাতুল জায়শে তাঁর কবর আছে।

মুযারঃ মুযারের প্রকৃত নাম ছিল আমর আর উপনাম ছিল আবূ ইলয়াস। মুযার ছিল তাঁর উপাধি। মুযার শব্দটির মূল মাযির, যার অর্থ কঠোর মেজাজ। তিনি কিছুটা কঠোর  স্বভাববিশিষ্ট হওয়ায় তাঁর উপাধি মুযার হয়ে যায়। তিনি ছিলেন অত্যন্ত জ্ঞানী ও বুদ্ধিমান।

 

ইলয়াসঃ-  হযরত ইলয়াস (আঃ) এর নামানুসারে এ জন্যে নাম রাখা হয় যে, তিনিই প্রথম পবিত্র বায়তুল্লাহ হতে কুরবানীর পশু প্রেরণের প্রচলন করেন। বলা হয়ে থাকে যে, ইলয়াস ইবন মুযার স্বীয় পৃষ্ঠদেশ থেকে নবী (সঃ) এর হজ্জের তালবিয়া শ্রবন করতেন। এটাও বলা হয় যে, নবী করীম (সঃ) ইরশাদ করেন: ইলয়াসকে মন্দ বলো না, কারণ তিনি ম’মিন ছিলেন।

মুদরিকাঃ- প্রসিদ্ধ আলিমগণের বক্তব্য অনুযায়ী মুদরিকার নাম ছিল আমর। মুহাম্মদ ইবন ইসহাক বলেন, তাঁর নাম ছিল আমর। আর মুদরিকা ছিল উপাধি যা ইদারক শব্দ থেকে উদ্ভুত। যেহেতু  সব ধরণের সম্মান ও মর্যাদা তিনি অর্জন করেছিলেন, এজন্যে তাঁর উপাধি মুদরিকা হয়েছিল।

খুযায়মাঃ- হযরত ইবন আব্বাস (রাঃ) খুযায়মা হযরত ইব্রাহীম (আঃ) এর ধর্মাদশের উপর ইনতেকাল করেন।

কিনানাঃ- আরবে তাঁকে প্রভাবশালী ও সম্ভ্রান্ত মনে কর হত। জ্ঞান ও প্রজ্ঞার কারণে দূর-দূরান্ত থেকে লোকজন তাঁর নিকট আগমন করত।

নযরঃ- নাযারাতুন মূল ধাতু থেকে উদ্ভুত, যার অর্থ চাকচিক্যময়, চির সতেজ। সৌন্দর্য ও সুঠাম দেহের কারণে তাঁকে এ নামে ডাকা হয়। তাঁর প্রকৃত নাম ছিল কায়স।

মালিকঃ- তাঁর নাম ছিল মালিক এবং ‍উপাধি ছিল আবুল হারিস। তিনি সমসাময়িক আরবে নেতৃস্থানীয় ব্যক্তি ছিলেন।

ফিহরঃ-  তাঁর নাম ছিল ফিহর, উপাধি ছিল কুরায়শ। কেউ কেউ বলেন, কুরায়শ ছিল তাঁর নাম আর ফিহরই ছিল উপাধি। তাঁর বংশধরগণকে কুরায়শী বলা হয়।

কা’বঃ- জুম’আর দিন ( যার পূর্ব নাম ছিল আরূবা ) লোকজনকে একত্রিত হওয়ার পদ্ধতি সর্বপ্রথম কা’ব ইবন লুয়াই প্রচলন করেন। কা’ব ইবন লুয়াই জুমা’আর দিন লোকজনকে একত্রিত করে খুতবা দিতেন। এতে প্রথমে আল্লাহ তা’আলার প্রশংসা ও গুন বর্ণনা করতেন ‍যে, আসমান-যমীন, চন্দ্র-সূর্য সবকিছু আল্লাহরই সৃষ্টি, এরপর জনগণকে বিভিন্ন সদুপদেশ দান করতেন। পরোপকারকে উৎসাহ দিতেন। আর বলতেন, আমার বংশে একজন নবী আসবেন, যদি তোমরা ঐ সময় বেঁচে থাকো, তা হলে তাঁর অনুসরণ করো।

মুররাঃ- শব্দটি মারারাত থেকে গৃহীত, যার অর্থ তিক্ত। যে ব্যক্তি শক্তিশালী ও বীরত্বব্যঞ্জক হতেন, আরবে এরূপ ব্যক্তিকে মুররা বলা হত। তারা এজন্যে এরূপ ব্যক্তিকে মুররা বলতো যে, এ ব্যক্তি নিজ শত্রুদের জন্য খুবই তিক্ত। হযরত আবূ বকর (রাঃ) ও হযরত তালহা (রা ) তাঁরই বংশধর ছিল।

কিলাবঃ- কালব শব্দের বহুবচন। কোন ব্যক্তি আবুর রাকিশ আরাবীকে প্রশ্ন করেছিল, এরূপ করার কারণ কি যে, তোমরা তোমাদের  সন্তানদের জন্য কালব (কুকুর) যি’ব (নেকড়ে) এ ধরনের খারাপ নাম আর ভৃত্যদের জন্য মারযূক (রিযিকপ্রাপ্ত) রাবাহ (উপকারপ্রাপ্ত)  এ ধরণের উত্তম নাম গ্রহন কর? আবুর রাকিশ আরাবী জবাব দিলেন যে, আমরা সন্তানদের নাম দুশমনদের জন্য এবং ভৃত্যদের নাম আমাদের জন্য রাখি। অর্থাৎ ভৃত্য তো কেবল আমাদের সেবার জন্য রাখা হয়, এর বিপরীতে সন্তানগণ শত্রুর সামনে বুক পেতে যুদ্ধ করে। এজন্যে তাদের নাম এরূপ রাখা হয়, যাতে  এ ধরনের নাম শুনে শত্রুরা ভীত হয় । কিলাবের নাম ছিল হাকিম কিংবা উরওয়া অথবা মুহাযযাব। নানান মতে কিলাব শিকারে আগ্রহী ছিলেন। এজন্য তিনি শিকারী কুকুর পুষতেন। ফলে তিনি কিলাব নামে আখ্যায়িত হন।

কুসাইঃ- কুসাইয়ের নাম ছিল মুজমি’ বা একত্রকারী, যা জমা থেকে উদ্ভুত। কুসাই যেহেতু কুসাই যেহেতু কুরায়শের বিচ্ছিন্ন বিক্ষিপ্ত গোত্রগুলোকে একত্র করেছিলেন, এজন্যে তাঁকে মুজমি বা একত্রকারী বলা হত। কুরায়শরা প্রথমে বিক্ষিপ্ত ছিল এবং এক স্থানে বসবাসরাত ছিল না। কেউ ছিল পাহাড়ে, কেউ ছিল ময়দানে, কেউ ছিল উপত্যকায়, কেউ ছিল গুহায়। কুসাই সব গোত্রকে মক্কায় আশ্রয়ে একত্রিত করেন  এবং প্রত্যেকের পৃথক পৃথক আবাসের জন্য স্থা চিহ্নিত করে দেন- এভাবে তিনি সবাইকে একত্রিত করেন। তখন থেকেই তাঁকে মুজমি বলে সম্বোধন করা হয়ে থাকে।

 

 

 

 

0 Comments

আমার ব্লগ তালিকা