সূরা ইয়াছিন




২. প্রজ্ঞাময় কোরআনের শপদ,    

৩. নিশ্চয় আপনি প্রেরিত রসূলগনের মধ্যে একজন,    

৪. সরল পথে প্রতিষ্ঠিত।   

৫. কোরআন পরাক্রমাশালী পরম দয়ালু আল্লাহর তরফ হইতে অবর্তীণ,   

৬. যাতে আপনি এমন এক জাতিকে সর্তক করেন, যাদের পূর্ব পুরুষগণকেও সতর্ক করা হয়নি। ফলে তারা গাফেল।   

৭. তাদের অধিকাংশের জন্যে শাস্তির বিষয় অবধারিত হয়েছে। সুতরাং তারা বিশ্বাস স্থাপন করবে না।  

৮. আমি তাদের গর্দানে চিবুক পযর্ন্ত বেড়ী পরিয়েছি। ফলে তাদের মস্তক উর্দ্ধমুখী হয়ে গেছে।  

৯. আমি তাদের সামনে ও পিছনে প্রাচীর স্থাপন করেছি, অতঃপর তাদেরকে আবৃত করে দিয়েছি,  ফলে তারা দেখে না।  

১০. আপনি  তাদেরকে সতর্ক করুন বা না করুন, তাদের পক্ষে দুইই সমান, 
       তারা বিশ্বাস স্থাপন করবে না।  

১১. আপনি কেবল তাদেরকেই সতর্ক করতে পারেন, যারা উপদেশ অনুসরণ করে এবং দয়াময়  আল্লাহকে না দেখে ভয় করে। অতএব আপনি তাদেরকে সুসংবাদ দিয়ে দিন ক্ষমা এবং  সম্মানজনক পুরস্কার।  

১২. আমিই মৃতদেরকে জীবিত করি এবং তাদের কর্ম ও কীর্তিসমূহ লিপিবদ্ধ করি। আমি প্রত্যেক বস্তু   স্পষ্ট কিতাবে সংরক্ষিত রেখেছি।  

১৩. আপনি তাদের কাছে সে জনপদের অধিবাসীদের দৃষ্টান্ত বর্ণনা করুন, যখন সেখানে রসূল আগমন  করেছিলেন।  

১৪. আমি তাদের নিকট দুইজন রসূল প্রেরন করেছিলাম, অতঃপর ওরা তাদেরকে মিথ্যা প্রতিপন্ন    করল। তখন আমি তাদেরকে শক্তিশালী করলাম তৃতীয় একজনের মাধ্যমে। তারা সবাই বলল,  আমরা তোমাদের প্রতি প্রেরিত হয়েছি।  

১৫. তারা বলল, তোমরা  তো আমাদের মতই মানুষ, রহমান আল্লাহ কিছুই নাযিল করেননি। তোমরা  কেবল মিথ্যাই বলে যাচ্ছ।

১৬. রসূলগন বলল, আমাদের পরওয়ারদেগার জানেন, আমরা অবশ্যই তোমাদের প্রতি প্রেরিত হয়েছি।

১৭. পরিস্কারভাবে আল্লাহর বাণী পৌঁছে দেয়াই আমাদের দয়িত্ব।

১৮. তারা বলল, আমরা তোমাদেরকে অশুভ-অকল্যানকর দেখছি। যদি তোমরা  বিরত না হও, তবে  অবশ্যই তোমাদেরকে প্রস্তর বর্ষণে হত্যা করব এবং আমাদের পক্ষ থেকে তোমাদেরকে 
       যন্ত্রনাদায়ক শাস্তি স্পর্শ করবে।

১৯. রসূলগণ বলল, তোমাদের অকল্যাণ তোমাদের সাথেই। এটা কি এজন্যে যে, আমরা তোমাদেরকে সদুপদেশ দিয়েছি? বস্তুতঃ তোমরা সীমা লংঘনকারী সম্প্রদায়।

২০. অতঃপর শহরের প্রান্তভাগ থেকে এক ব্যক্তি দৌড়ে এল। সে বলল , হে আমার সম্প্রদায় তোমরা রসূলগণকে অনুসরণ কর।

২১. অনুসরণ কর তাদের , যারা তোমাদের কাছে কোন বিনিময় কামনা করে না, অথচ তারা সুপথ প্রাপ্ত।

২২. আমার কি হল যে, যিনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন এবং যার কাছে তোমরা প্রত্যাবর্তিত হবে, আমি তাঁর এবাদত করব না?

২৩. আমি কি তাঁর পরিবর্তে অন্যান্যদেরকে উপাস্যরূপে গ্রহন করব? করুনাময় যদি আমাকে কষ্টে নিপতিত করতে চান, তবে তাদের সুপারিশ আমার কোনই কাজে আসবে না এবং তারা আমাকে রক্ষাও করতে পারবে না।


২৪. এরূপ করলে আমি প্রকাশ্য পথভ্রষ্টতায় পতিত হব।

২৫. আমি নিশ্চিতভাবে তোমাদের পালনকর্তার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করলাম। অতএব, আমার কাছ থেকে শুনে নাও।

২৬. তাকে বলা হল, জান্নাতে প্রবেশ কর। সে বলল হায়! আমার সম্প্রদায় যদি কোন ক্রমে জানতে পারত।

২৭. যে আমার পরওয়ারদেগার  আমাকে ক্ষমা করেছেন এবং আমাকে সম্মানিতদের অন্তর্ভুক্ত করেছেন।

২৮. তারপর আমি তার সম্প্রদায়ের উপর আকাশ থেকে কোন বাহিনী অবর্তীণ করিনি আমি (বাহিনী ) অবতরণকারীও না।

২৯. বস্তুত এ ছিল এক মহানাদ। অতঃপর সঙ্গে সঙ্গে সবাই স্তব্ধ হয়ে গেলো।

৩০. বান্দাদের জন্য আক্ষেপ যে, তাদের কাছে এমন কোন রসূল আগমন করেনি  যাদের প্রতি তারা বিদ্রুপ করে না।

৩১. তারা কি প্রত্যক্ষ করে না, তাদের পূর্বে আমি কত সম্প্রদায়কে ধ্বংস করেছি যে, তারা তাদের মধ্যে  আর ফিরে আসবে না।

৩২. ওদের সবাইকে সমবেত অবস্থায় আমার দরবারে উপস্থিত হতেই হবে।

৩৩. তাদের জন্য একটি নিদর্শন মৃত পৃথিবী। আমি একে সঞ্জীবিত করি এবং তা থেকে উৎপন্ন করি শস্য, তারা তা থেকে ভক্ষণ করে।

৩৪. আমি তাতে সৃষ্টি করি খেজুর ও আঙ্গুরের বাগান এবং প্রবাহিত করি তাতে নির্ঝরিণী।

৩৫. যাতে তারা তার ফল খায়। তাদের হাত একে সৃষ্টি করে না। অতঃপর তারা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে না কেন?

৩৬. পবিত্র তিনি যিনি যমীন থেকে উৎপন্ন উদ্ভিদকে ,তাদেরই মানুষকে  এবং যা তারা জানে না, তার প্রত্যেককে জোড়া জোড়া করে সৃষ্টি করেছেন।


৩৭. তাদের জন্যে এক নিদর্শন রাত্রি, আমি তা থেকে দিনকে অপসারিত করি, তখনই তারা অন্ধকারে থেকে যায়।

৩৮. সূর্য তার নির্দিষ্ট অবস্থানে আবর্তন করে। এটা পরাক্রমাশালী, সর্বজ্ঞ, আল্লাহর নিয়ন্ত্রন। 

৩৯. চন্দ্রের জন্য আমি বিভিন্ন মনযিল নির্ধারিত করেছি। অবশেষ সে পুরাতন খর্জুর শাখার অনুরূপ হয়ে যায়।

৪০. সূর্য নাগাল পেতে পারে না চন্দ্রের এবং রাত্রি অগ্রে চলে না দিনের , প্রত্যকে তার আপন আপন কক্ষপথে সন্তরণ করে।

৪১. তাদের জন্যে একটি নিদর্শন এই যে, আমি তাদের সন্তান-সন্ততিকে বোঝাই নৌকায় আরোহণ করিয়েছি।

৪২. এবং তাদের জন্যে নৌকার অনুরূপ যানবাহন সৃষ্টি করেছি, যাতে তারা আরোহণ করে। 

৪৩. আমি ইচ্ছে করলে তাদেরকে নিমজ্জিত করতে পারি, তখন তাদের জন্যে  কোন সাহায্যকারী নেই এবং তারা পরিত্রানও পাবে না।

৪৪. কিন্তু আমারই পক্ষ থেকে কৃপা এবং তাদেরকে কিছুকাল জীবনোপভোগ করার সুযোগ দেয়ার কারণে তা করি না।

৪৫. আর যখন তাদেরকে বলা হয় , তোমরা সামনের আযাব এবং পিছনের আযাবকে ভয় কর, যাতে তোমাদের প্রতি অনুগ্রহ করা হয়, তখন তারা তা অগ্রাহ্য করে।

৪৬. যখনই তাদের পালনকর্তার নির্দেশাবলীর মধ্যে থেকে কোন নির্দেশ তাদের কাছে আসে, তখনই তারা তা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়।


৪৭. যখন তাদেরকে  বলা হয়, আল্লাহ তোমাদেরকে যা দিয়েছেন, তা থেকে ব্যয় কর। তখন কাফেররা মুমিনগনকে বলে, ইচ্ছা করলেই আল্লাহ যাকে খাওয়াতে পারেন, আমরা তাকে কেনো খাওয়াব? তোমরা তো স্পষ্ট বিভ্রান্তিতে পতিত রয়েছে।

৪৮. তারা বলে, তোমরা সত্যবাদী হলে বল এই ওয়াদা কবে পূর্ণ হবে? 

৪৯. তারা কেবল একটা ভয়াবহ শব্দের অপেক্ষা করছে, যা তাদেরকে আঘাত করবে তাদের পারস্পারিক বাকবিতন্ডাকালে।

৫০. তখন তারা অছিয়ত করতেও সক্ষম হবে না। এবং তাদের পরিবার-পরিজনের কাছেও ফিরে যেতে পারবে না।

৫১. শিংগায় ফুঁক দেয়া হবে, তখনই তারা কবর থেকে তাদের পালনকর্তার দিকে ছুটে চলবে।

৫২. তারা বলবে, হায় আমাদের দুর্ভোগ! কে আমাদেরকে নিদ্রাস্থল থেকে উথিত করল?  রহমান আল্লাহ তো এরই ওয়াদা দিয়েছিলেন এবং রসুলগণ সত্য বলেছিলেন।

৫৩. এটা তো হবে কেবল এক মহানাদ। সে মুহুর্তেই তাদের সবাইকে আমার সামনে উপস্থিত করা হবে।

৫৪. আজকের দিনে করো প্রতি জুলুম করা হবে না এবং তোমরা যা করবে কেবল তারই প্রতিদান পাবে।

৫৫. এদিন জান্নাতীরা আনন্দে মশগুল থাকবে।

৫৬. তারা এবং তাদের স্ত্রীরা উপবিষ্ট থাকবে ছায়াময় পরিবেশে আসনে হেলান দিয়ে।

৫৭. সেখানে থাকবে তাদের জন্যে ফল-মূল এবং তাদের জন্য বাঞ্ছিত সমস্ত কিছু।

৫৮. করুনাময় পালনকর্তার পক্ষ থেকে তাদেরকে বলা হবে সালাম।

৫৯. হে অপরাধীরা! আজ তোমরা আলাদা হয়ে যাও।

৬০. হে বনী-আদম! আমি কি তোমাদেরকে বলে রাখিনি যে , শয়তানের এবাদত কর না, সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু?

৬১.এবং আমার এবাদত কর। এটাই সরল পথ।

৬২.শয়তান তোমাদের অনেক দলকে পথভ্রষ্ট করেছে। তুবও কি তোমরা বুঝনি?

৬৩. এই সেই জাহান্নাম, যার ওয়াদা তোমাদেরকে দেয়া হতো।

৬৪. তোমাদের কুফরের কারণে আজ এতে প্রবেশ কর।

৬৫.আজ আমি তাদের মুখে মোহর এঁটে দেব, তাদের হাত আমার সাথে কথা বলবে এবং তাদের পা তাদের কৃতকর্মের সাক্ষ্য দেবে।

৬৬. আমি ইচ্ছে করলে তাদের দৃষ্টিশক্তি বিলুপ্ত করে  দিতে পারতাম, তখন তারা পথের দিকে দৌড়াতে চাইলে কেমন করে  দেখতে পেত!

৬৭. আমি ইচ্ছে করলে তাদেরকে স্ব স্ব স্থানে আকার বিকৃত করে দিতে পারতাম, ফলে তারা আগেও  চলতে পারত না এবং পেছনেও ফিরে যেতে পারত না।

৬৮.আমি যাকে দীর্ঘ জীবন দান করি, তাকে সৃষ্টিগত পূর্ব অবস্থায় ফিরিয়ে নেই। তুবও কি তারা বুঝে না?

৬৯. আমি রসূলকে কবিতা শিক্ষা দেই নি এবং তাঁর জন্য তা শোভনীয়ও নয়। এটা তো এক উপদেশ ও প্রকাশ্য কোরআন।

৭০. যাতে তিনি সর্তক করেন জীবিতকে এবং যাতে কাফেরদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রতিষ্ঠিত হয়।

৭১. তারা কি দেখে না , তাদের জন্যে আমি আমার নিজ হাতের তৈরী বস্তুর চতুস্পদ জন্তু সৃষ্টি করেছি, অতঃপর তারাই এগুলোর মালিক।

৭২. আমি এগুলোকে তাদের হাতে অসহায় করে দিয়েছি। ফলে এদের কতক তাদেরকে বাহন এবং কতকে তারা ভক্ষণ করে।

৭৩. তাদের জন্যে চতুস্পদ জন্তুর মধ্যে অনেক উপকারিতা ও পানীয় রয়েছে। তুবও কেন তারা শুকরিয়া আদায় করে না?

৭৪. তারা আল্লাহর পরিবর্তে অনেক উাপস্য গ্রহণ করেছে যাতে তারা সাহায্য প্রাপ্ত হতে পারে।

৭৫. অথচ এসব উপাস্য তাদেরকে সাহায্য করতে সক্ষম হবে না এবং তাদের বাহিনী রূপে ধৃত হয়ে আসবে।

৭৬. অতএব, তাদের কথা যেন আপনাকে দুঃখিত না করে। আমি জানি যা তারা গোপন করে  এবং যা তারা প্রকাশ্যে করে।

৭৭.মানুষ কি দেখে না যে, আমি তাকে সৃষ্টি করেছি বীর্য থেকে? অতঃপর তখনই সে হয়ে গেল প্রকাশ্য বাকবিতন্ডাকারী।

৭৮. সে আমার সম্পর্কে এক A™¢‚Z  কথা বর্ণনা করে, অথচ সে নিজের সৃষ্টির কথা ভুলিয়া যায়। সে বলে , কে অস্থিতে প্রাণ সঞ্চার করিবে যখন উহা পচিয়া-গলিয়া যাইবে?

৭৯. বলুন , যিনি প্রথমবার সেগুলোকে সৃষ্টি করেছেন, তিনিই জীবিত করবেন। তিনি সর্বপ্রকার সৃষ্টি সম্পর্কে সম্যক অবগত।

৮০. যিনি তোমাদের জন্য সবুজ বৃক্ষ থেকে আগুন উৎপন্ন করেন। তখন তোমরা তা থেকে আগুন জ্বালাও।

৮১. যিনি নভোমন্ডল ও ভূমন্ডল সৃষ্টি করেছেন, তিনিই কি তাদের অনুরূপ সৃষ্টি করতে সক্ষম নন? হ্যাঁ তিনি মহাস্রষ্টা, সর্বজ্ঞ।

৮২. তিনি যখন কোন করতে ইচ্ছা করেন, তখন তাকে কেবল বলে দেন, ’হও’ তখনই তা হয়ে যায়।

৮৩.অতএব পবিত্র তিনি, যাঁর হাতে সবকিছুর রাজত্ব এবং তাঁরই দিকে তোমরা প্রত্যাবর্তিত হবে।




ধন্যবাদান্তে,

0 Comments

আমার ব্লগ তালিকা