হযরত আবু বকর (রাঃ) এর অলৌকিক ঘটনা

 

 হযরত আয়েশা (রাঃ) বলেছেন, আমার পিতা হযরত আবু বকর(রাঃ) এক সময় আমাদের লক্ষ্য করে বললেন, তোমাকে আমার বৃক্ষের খেজুরগুলি  দান করলাম। এসময় বৃক্ষে আনুমানিক পাঁচ মনের মত খেজুর ছিল। ইহার কিছুদিন পর মৃত্যুর পূর্বক্ষণ এ  পিতাজি বললেনমা- আয়েশা, ধন-সম্পদের দিক দিয়ে তুমি আমার কাছে প্রিয়। তোমার অভাব অভিযোগ আমার কাছে অপছন্দনীয়। আমি তোমাকে যে খেজুরগুলো দান করেছিলাম তুমি যদি উহা তখন নিজের কাছে নিয়ে রাখতে হবে উহা তোমারই স্বত হত। কিন্তু যখন তা করো নাই তখন আমার সকল ওয়ারিশদের জন্য  উহা স্বত  হবে।  উহা তোমার  দুই ভাই ও   দুই বোনেরও সম্পত্তি রূপে গণ্য হবে। তাই ও পবিত্র কোরআনের নির্দেশ অনুসারে ভাগ করে  নেবে

 মা আয়েশা(রাঃ) বললেন, আমার পিতাজীর কথার জবাবে আমি বললাম, আব্বাজান, আপনার প্রদত্ত বস্তু যদি আরো বেশি পরিমাণে হতো তবুও হা সমস্ত আমি নিজে গ্রহণ না করে শরীয়তের বিধি অনুসারে আমার প্রাপ্য অংশটুকু গ্রহণ করতাম।  কিন্তু বলুনতো আব্বাজান, আমার বোন তো এক আসমা। আপনি আমার দুই বোনের কথা বললেন কেন? উহার কারণ তো বুঝতে পারলাম না

 জবাবে পিতাজী বললেন, মা! আমি বিনতে  খারেজের ঘরে একটি কন্যা সন্তান রয়েছে দেখতে পাচ্ছি

সত্যিই হযরত আবু বকর (রাঃ) এর মৃত্যুর পর খারেজের গর্ভ থেকে একটি কন্যা  ভূমিষ্ঠ হয়েছিল। হযরত আবু বকর (রাঃ)

 এর এ কন্যাটির নামেই  উম্মে কুলসুম । হযরত আবু বকর(রাঃ) তার অসুস্থ অবস্থায় একদা কন্যা বিবি আয়েশা(রাঃ)

 এর কাছে জিজ্ঞাসা করলেনমা-আয়েশা! বলতো হযরত রাসূলে কারীম (সঃ) কোন দিন ইন্তেকাল করেছেনহযরত আয়েশা(রাঃ)  জবাব দিলেন, সোমবার দিন ইন্তেকাল করেছেন

 তখন হযরত আবু বকর(রাঃ) বললেন, আমি মনে হয় তার একদিন পর রওনা দেব। পরে যথা  সময় দেখা গেল, সত্যিই হযরত রাসূলে কারীম(সঃ)  এর ইন্তেকালের তারিখের একদিন পর হযরত আবু বকর(রাঃ)

 পরলোক গমন করলেন

 একদা হযরত রাসূলে কারীম(সঃ) হরযত  আবু  বকর (রাঃ)  এর নিকট উপস্থিত হয়ে তাকে অসুস্থ অবস্থায়  দেখতে পেলেন

 অতঃপর তার নিকট থেকে বিদায় নিয়ে গৃহে এসে হযরত আয়েশা(রাঃ)   এর নিকট   বললেন, তোমার পিতাকে অসুস্থ দেখে আসলাম ইহার একটু পরেই হযরত আবু বকর(রাঃ) তথায় উপস্থিত হয়ে রাসুলুল্লাহ (সঃ)   এর গৃহের দ্বারে  করাঘাত করে ভিতরে প্রবেশের অনুমতি চাইলেন

 হযরত আয়েশা(রাঃ)  রাসূলে কারীম(সঃ) কে বললেন, বাইরে আব্বাজানের কণ্ঠস্বর শুনছি

রাসুলুল্লাহ(সঃ) বিস্ময়  প্রকাশ করে বললেন,এত তাড়াতাড়ি আপনার রোগ আল্লাহ  আরোগ্য করে দিয়েছেন?

 জবাবে হযরত আবু বকর(রাঃ)  বললেনইয়া রাসুলুল্লাহ (সঃ) আপনি আমার নিকট থেকে চলে আসার পর মুহূর্তে ফেরেশতা জিব্রাইল (আঃ)  এসে আমার নাসিকাগ্রে একটি ওষুধ ধরলেন। ঔষধের  ঘ্রাণ লওয়ার  সাথে সাথেই আল্লাহর রহমতে আমি সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে গিয়েছি

 

হযরত আবু বকর(রাঃ) এর একটি কারামত ছিল এই যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই সালাম ও হযরত জিব্রাইল আলাই সালাম এর সাথে কথোপকথন তিনি শুনতে পেতেন।তিনি ছাড়া অন্য কোন সাহাবী শুনতে পান নাই। জিবরাঈল আলাইহিস সালাম কে হযরত আবু বকর(রাঃ) ও দেখতে পেতেন না

 হযরত আবু বকর (রাঃ)  এর পিতা কোহাফা (রাঃ)  দীর্ঘজীবী পুরুষ ছিলেন। তার পুত্র হযরত আবু বকর (রাঃ) পিতার জীবদ্দশায়ই  মৃত্যুবরণ করেছিলেন। যখন আবু বকর (রাঃ)   এর জান কবজ হচ্ছিল, তখন মক্কার কাবা গৃহ থরথর করে কাঁপতে লাগলো। ইহা  দেখে হযরত আবু কুহাফা(রাঃ)  উপস্থিত লোকদের কাছে জিজ্ঞেস করলেন, ভূমিকম্প হচ্ছে বোধ হয়।  তার উত্তরে তারা বলল, ইহা ভূমিকম্প নয়। হযরত আবু বকর(রাঃ)  এর কারণেই মক্কা নগরী  কম্পিত  হচ্ছে

হুদায়বিয়ার সন্ধির সময় হযরত আবু বক্কর(রাঃ)  এর আরেকটি ক্যারাম দেখা গিয়েছিল।  যেমন- হযরত ওমর ফারুক বললেন , যখন হযরত রাসূলে কারীম (সঃ)  হুদায়বিয়ার সন্ধি করতে সম্মত হলেন, তখন শেষ অবমাননাকর মনে হওয়ায়  আমি রাসূলে কারীম(সঃ)  এর কাছে জিজ্ঞেস করলাম  ইয়া রাসুলুল্লাহ(সঃ) !  আপনি কি আল্লাহর সত্যিকারের রসূল ননতিনি বললেন হ্যাঁনিশ্চয়ই আমি আল্লাহর রসূল

 আমি পুনরায় জিজ্ঞাসা করলাম, আমরা কি সত্যের উপর প্রতিষ্ঠিত  নয়ই? তিনি বললেন, হ্যাঁ অবশ্যই আমরা সত্যের উপর প্রতিষ্ঠিত। 

 আমি বললাম, তাহলে আমরা, ধর্মের ব্যাপারে এতটা দুর্বল প্রকাশ করব কেন?

 একথা শুনে রাসুলুল্লাহ(সঃ)  অত্যন্ত দৃঢ়তার  সাথে বললেন,আমি আল্লাহর রাসূল হয়ে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে কিছুই করতে পারিনা। জেনে রেখ তিনি সর্বদা আমাদের সহায় আছেন।  নিশ্চয়ই তিনি আমাদেরকে জয়যুক্ত করবেন। হযরত   ওমর ফারুক(রাঃ) বললেন, আমি পুনরায় রাসুলুল্লাহ(সঃ)  কে জিজ্ঞাসা করলাম, ইয়া রাসুলুল্লাহ(সঃ)  আপনি কি বলেন নাই যে, শীঘ্রই আমরা কাবাগৃহে   পৌঁছে   উহার তাওয়াফ করব

 

তিনি জবাব দিলেন, হ্যাঁ, সে কথা বলেছি, কিন্তু আমি কি বলেছি, আমরা এবছর কাবাগৃহে পৌঁছে  উহার  তাওয়াফ করবআমি বললাম  না, তা অবশ্যই বলেন নাই  তিনি বললেন, অবশ্যই আমরা যথাসময়ে কাবাগৃহে পৌঁছে  উহার তাওয়াফ করব।  হযরত ওমর (রাঃ)  বললেন, হযরত রাসূলে কারীম(সঃ)  এর সাথে আমার এসব কথোপকথন  কালে হযরত আবু বকর (রাঃ) আমাদের কাছে ছিলেন না।  অতঃপর আমি হযরত আবু বকর(রাঃ) এর নিকট গিয়ে তাকে জিজ্ঞাসা করলাম, ভাই আবু বকর (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সঃ) কি সত্যিকারের আল্লাহর রাসূল নন?

 তিনি জবাব দিলেন হ্যাঁ, নিশ্চয়ই তিনি আল্লাহর সত্যিকারের রসূল। 

আমি পুনরায় জিজ্ঞেস করলাম, আমরা কি সত্যের উপর প্রতিষ্ঠিত নই?

তিনি জবাব দিলেন হ্যাঁ, নিশ্চয়ই আমরা সত্যের উপর প্রতিষ্ঠিত। হযরত ওমর (রাঃ) রাসুলুল্লাহ (সঃ)  কে যে সমস্ত প্রশ্ন করেছিলেন হযরত আবু বকর (রাঃ)  কেও  একই প্রশ্ন করেছিলেন। কথা শুনে হযরত আবু বকর (রাঃ)  বললেন, শোন  হে  ওমর!

 নিশ্চয়ই তিনি  আল্লাহর রাসূল (সঃ) তিনি আল্লাহর রসূল হয়ে কিছুতেই তার বিরুদ্ধে কিছু করতে পারেন না।  আল্লাহ   স্বয়ং  তার  সহায় আছেন।  নিশ্চয়ই তাকে জয়যুক্ত করবেন।  অতএবহে ওমর(রাঃ)  তুমি অবিচলভাবে তাকে অনুসরণ করো। কারণ আল্লাহর শপথ  তিনি ন্যায় ও  সত্যের উপর রয়েছেন। 

হযরত ওমর (রাঃ)  বললেন, অতঃপর আমি তার কাছে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি একথা বলেন নাই যে, শীঘ্রই আমরা কাবাগৃহ পৌছে  উহার তাওয়াফ করব

 আমার প্রশ্ন শুনে  হযরত আবু বকর(রাঃ) আমাকে পাল্টা প্রশ্ন করলেন, তিনি কথা বলেছিলেন যে, এ বছরই আমরা কাবাগৃহে পৌঁছে উহার তাওয়াফ করব।  হযরত ওমর(রাঃ) বলেন, হযরত আবু বকর (রাঃ)  এর এই প্রশ্নে আমার চৈতন্যেদয় হল, আমি আমার ভুল বুঝতে পেরে অত্যন্ত লজ্জিত ও দুঃখিত হলাম এবং মনে মনে  অনুতপ্ত হলাম

 পাঠক সমাজ চিন্তা করুন যেহযরত ওমর (রাঃ) হযরত আবু বকর (রাঃ)  এর অনুপস্থিতিতে হযরত রাসুলে কারীম (সঃ)  এর কাছে যে সমস্ত প্রশ্ন করেছিলেন  এবং তিনি তাঁর সেই প্রশ্নগুলোর যে উত্তর ‍দিয়েছিলেন আবার অন্যত্র বসে হযরত আবু বকর (রাঃ) এর  কাছে সেই প্রশ্নগুলো করে তাঁর নিকট থেকেও অবিকল সে রকম উত্তর লাভ করেছিলেন। ইহার দ্বারা মনে হচ্ছে যে, হযরত আবু বকর(রাঃ)  যেন রাসূলে কারীম (সঃ)  এর দেয়া উত্তর  স্বকানে  শুনে এই রূপ  উত্তর প্রদান করেছিলেন। অথচ  হযরত  আবু বকর (রাঃ)  হযরত রাসূলে কারীম(সঃ)  এর নিকট উপস্থিত ছিলেন না এবং তার জবাব গুলো দিন শুনেন নাই। তবুও তার জবাব গুলো হযরত রাসূলে কারীম (সঃ)  এর  একটি বিশেষ কেরামত বা অলৌকিক ক্ষমতার নির্দেশন ছাড়া আর কিছুই নয়। 

রাসূলে কারীম সা সাল্লাল্লাহু আলাই সালাম এর প্রতি তাদের কেমন বিশ্বাস এবং কেমন সম্মান ছিল তা উপরে ঘটনা থেকেই বোঝা যায়।   ঠিক  আমাদেরও  এরূপ বিশ্বাস এবং রাসূলের প্রতি সম্মান  ও তার দেয়া  দিকনির্দেশনা  মেনে চলা উচিত

 

 




0 Comments

আমার ব্লগ তালিকা