রোম ও পারস্য অভিযান


 

 রাজ্য পরিচালনার ভার গ্রহণ করার  পরেই পারস্য ও রোমান সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধারণ করতে বাধ্য হয়েছিলেন হযরত আবু বকর  সিদ্দিক(রাঃ)। পারস্য তখন পরম ধন- ঐশ্বর্যে, বীরত্বে,   শৌর্যে  এবং লোক সংখ্যায় এত প্রবল  ছিল যে, হযরত আবু বকর (রাঃ)  এর মুষ্টিমেয় সৈন্য   তারা ফুৎকারে উড়িয়ে দিতে পারতো। কিন্তু খলিফা হযরত আবু বকর(রাঃ) ছিলেন সুদক্ষ পরিচালকঅটল আত্মবিশ্বাসী এবং লৌহ মানব। আল্লাহ রব্বুল আলামীনের প্রতি দৃঢ়  প্রত্যয় এবং সৎ সাহসের জন্য এ দুটি শক্তিমান সাম্রাজ্যের সাথে মরণ- পণ বিজয়মাল্য কন্ঠে কণ্ঠে ধারণ করেছিলেন। অতিশয় সংকট মুহূর্তে  তিনি ভীত হননি হননি সবসময়ই যুদ্ধ গামী সেনাপতি এবং সৈন্যদেরকে তিনি যা  যা নির্দেশ দান করতেন তা হলঃ

  • সব সময় মহান আল্লাহ রব্বুল আলামিন কে মনে রাখবে এবং তাকে ভয় করে চলবে
  •  তোমার আয়ত্তে যে সকল  সৈন্য  থাকবে  তাদের প্রতি সর্বদা ভদ্র ব্যবহার করবে
  •  নিজের ব্যবহার সবসমযয়ে সংযত রাখবে।  তাহলে অন্য সবাই তোমার আদর্শে অনুপ্রাণিত হবে। 
  •  সেনাবাহিনীকে   খুব অল্প কথায় নির্দেশ দান করবে। দীর্ঘ   বক্তৃতা  দিলে তারা ভুলে যেতে পারে
  • বিপক্ষ দলের অধিনায়ককেও  উপযুক্ত সম্মান প্রদর্শন করবে
  •   অসৎ চরিত্রের ব্যক্তি  এবং ভীরু ব্যক্তিদের সঙ্গে মেলামেশা করবে না
  •  তোমার অধীনস্ত  সৈন্য  সামন্তদের রাত্রির অবসর সময়ের যুদ্ধ সংক্রান্ত আলোচনা করবে

 

হযরত আবু বকর (রাঃ) মুসলিম রাজ্যের বিস্তার এবং রাষ্ট্রের পরিচালন পদ্ধতি সুন্দরভাবে গড়ে তুলেছিলেন প্রয়োজনবোধে সংগ্রামের পর সংগ্রাম চালিয়ে

বাহরাইনের বিদ্রোহ দমন করার সময় মুসলমান  সৈন্যগণ বুঝতে পারলো যে,   পারস্যবাদীগণ এবং পারস্য সম্রাট স্বয়ং বাহরাইনের বিদ্রোহীদেরকে সহযোগিতা করছেন। বাহরাইন আরব দেশের একটি অংশ। অতএব আইনকে পারস্যের জনগণ ও সহযোগিতা করবে তা গ্রহণ করা যায় না। পারস্যের সন্দেহজনক কাজের জন্য তাদের সাথে মুসলমানদের সংঘর্ষ অপরিহার্য হয়ে উঠেছিল

 

রাসুলুল্লাহ(সঃ)  এর যুগে নিকটবর্তী দেশসমূহের শাসনকর্তাদের কে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন।  শাহ  খসরু  ছিলেন সেসময় পারস্যের বাদশা। দূতের মারফত তার কাছেও  হযরত আবু বকর (রাঃ) ইসলাম গ্রহণের জন্য প্রস্তাব দিয়েছিলেন

 

 খুবই দাম্ভিক প্রকৃতির ব্যক্তি ছিলেন  শাহ খসরু।  তিনি  দুতকে খারাপ ভাষায় তিরস্কার করলেন।   দূতের সামনেই   তিনি ছেড়ে টুকরো টুকরো করে ফেলে দিলেন। শুধু তাই নয়, রাসূলুল্লাহ (সঃ) কে কোয়েদ  করার জন্য  ইয়েমেনের শাসনকর্তার কাছে  হুকুমনামা প্রেরণ করলেন। পারস্য রাজ্যের স্পর্ধা সীমা অতিক্রম করা সমগ্র মুসলিম সমাজ এবং রাষ্ট্র তার প্রতি বিরূপ হয়ে রইল

 

 তখন থেকে পারস্যের জনগণ ইসলাম ধর্ম ও রাষ্ট্রের প্রতি ক্ষতিসাধন করার জন্য নানা চেষ্টা করতে থাকে।   ফলে  বিদ্রোহী  বাহরাইন দেরকে তারা নানাভাবে সাহায্য করতে থাকায় হযরত আবু বকর (রাঃ)  এর উচিত শিক্ষা দেওয়ার সংকল্প করলেন।  এদের উপযুক্ত শিক্ষা না দিলে সীমান্তে নানাপ্রকার বিঘ্ন সৃষ্টি হতে পারে

 

 হিজরী  12 সালে খলিফা হযরত আবু বকর(রাঃ)  পারস্য সম্রাট খসরু বিরুদ্ধে শক্তিশালী 10 পাঠালেন।  মুসান্না  বিন হারিস ছিলেন সিপাহী দলের অধিনায়ক। সেসময় পারস্যের অধিপতি খসরুর  দোর্দণ্ড প্রতাপ এবং  অমিত বিদ্যমান ছিল।  হযরত আবু বকর (রাঃ) সমগ্র বিষয়ের গুরুত্ব উপলব্ধি করে পুনরায় মহাবীর খালিদকে মুসান্না বিন হারিসের সাহায্যার্থে একদল সৈন্য সহ প্রেরণ করলেন।  হাফির নামক স্থানে  সর্বপ্রথম মুসলিম  ফৌজের সাথে  পারস্য সৈন্যের সংঘর্ষ হয়।   সালমান সৈন্যের বীরত্ব এবং সূর্য পারস্যের  সৈন্যদল হতভম্ব হয়ে মেসোপটেমিয়া অভিমুখে পালন করতে বাধ্য হয়েছিল

 অতঃপর দুর্ধর্ষ  পারস্য বাহিনীর সাথে মুসলিমদের  মোট 15 টি যুদ্ধ হয়েছিল। প্রত্যেক যুদ্ধে  পারস্য বাহিনীকে শোচনীয়ভাবে পরাজয় বরণ করতে হয়েছিল। রোম সাম্রাজ্য সে সময় প্রবল শক্তিশালী ছিল।  এর অধিপতি হিরাক্লিয়াস  ছিলেন  জাতিতে খ্রিষ্টান।তার প্রকৃতির ছিল অতিশয় দুরদরসো এবং উগ্র। রাসুলুল্লাহ(সঃ)  তার কাছে একজন দুধ প্রেম করেছিলেন ইসলাম গ্রহণের আমন্ত্রণ জানিয়ে

 হিরাক্লিয়াস  অন্ধ হয়ে সেই দূতকে  নির্মমভাবে হত্যা করেছিলেন।দুতকে হত্যা করা রাজনীতির বিরুদ্ধ ধর্ম এবং তা খুবই ন্যাক্কারজনক কাজ।  এ হত্যাকাণ্ডের দরুন মুসলমানগণখুবই রাগান্বিত হয়ে উঠেছিলেন। এর পরিণতি স্বরূপ রোমানদের সঙ্গে    রোমান  সৈন্যদেরএকটি খন্ড যুদ্ধ হল। 

 

 অতঃপর কিছু দিন  নীরবে অতিবাহিত হলো হয়ে  গেল।  রাসুলুল্লাহ (সঃ)  এর মৃত্যুর পরে খলিফা হযরত আবু বকর(রাঃ)  মুসলিম জাহানের শাসনদন্ড গ্রহণ করায়  তার খ্যাতি এবং  শান-শওকত  রোমানদের অসহ্য হয়ে উঠেছিল। নানা প্রকারে মুসলমানদের ক্ষতি সাধন করার জন্য তারা তৎপর হয়ে উঠেছিল।  আরববাসিগন সিরিয়ায় ব্যবসা-বাণিজ্য করতেন। এটা তাদের     আয়ের প্রধান উৎস ছিল।সিরিয়াস ছিল রোম সাম্রাজ্যের অন্তর্গত। অতএব, আরববাসী বাণিজ্য উপলক্ষে প্রায়ই  সিরিয়ায় যাতায়াত করতে হইতো।  রোমানগন  আরবের এ ব্যবসায়ী সম্প্রদায়কে  জব্দ করে উপায় আবিষ্কার করল।  তারা আরববাসীদেরকে  সিরিয়ায় প্রবেশে বাধা দিতে আরম্ভ করলো। তাছাড়া সীমান্তের মুসলমানদের নানাভাবে  উৎপীড়ন করার জন্য রোমানদের উৎসাহিত করতে লাগলো। খলিফা হযরত আবু বকর (রাঃ)   রোমানদের এসব অত্যাচার এবং উত্পীড়নের সংবাদ পেয়ে খুবই বিরক্ত হলেন।  তিনি তাদের সমুচিত শিক্ষাদানের উদ্দেশ্যে রোমানদের বিরুদ্ধে এক দল সাহসী এবং  বীর সেনাকেপ্রেরণ করলেন। 

ওই সৈন্য বাহিনীতে   4 শ্রেণীতে বিভক্ত হয়ে রোম সাম্রাজ্য আক্রমণ করলেন। রোমস সৈন্যদের সাথে মুসলমান  সিপাহীদের খন্ড খন্ড যুদ্ধ চলিতে লাগলো ।   এ সময় খুবই   চতুর  রণবীদ  মহাবীর খালিদ বিন ওয়ালিদ (রাঃ)   ছিলেন রাজ্যের  সমরক্ষেত্রে। খলিফা হযরত আবু বকর (রাঃ)  তাকে

 খোঁজ করলেন এবং রোমানদের বিরুদ্ধে সিরিয়ার  রন প্রাঙ্গণে মুসলমান  সৈন্যদের  অধিনায়কত্ব করার জন্য নির্দেশ প্রদান করলেন

এদিকে ও রোমান সৈন্য বাহিনীর যুদ্ধ পরাজিত হওয়ার সংবাদ পাইয়া হিরাক্লিয়াস   ক্রোধে অন্ধ হয়ে মুসলিম বাহিনীকে পর্যদুস্ত করার জন্য এবং দুর্ধর্ষ সেনাবাহিনীকে প্রেরণ করলেন। মুসলিম সৈন্য বাহিনীর সাথে রোমানদের প্রবল যুদ্ধ চলতে লাগলো। রোমানগন  বিপক্ষ দলের  অস্ত্রের সামনে টিকে থাকতে পারল না । তারা ধীরে ধীরে পিছনের দিকে যেতে বাধ্য হল। মুসলমানগন অমিত বিক্রম যুদ্ধ করে দামেস্ক এবং  বসরা নগর অধিকার করলেন

ইয়ারমুকের যুদ্ধ

 হিরাক্লিয়াস 2 লক্ষ 40 হাজার   খ্রিস্টান সৈন্য সমাবেশ করলেন। সৈন্য বাহিনী খুবই অল্প। শুধুমাত্র 60 হাজার সৈন্য বাহিনী

 এ মুজাহিদ সৈন্যদলের বুকে দুর্বার সাহস, চোখে অনন্ত আশা, মনে  দৃঢ়  বিশ্বাস। তারা এসেছে জন্মভূমির সম্মান রাখতে ইসলামের বিজয় নিশান দেশে-বিদেশে  ঊর্ধ্বে তুলে ধরতে। তারা এসেছে স্বত:প্রবৃত্ত হয়ে স্বজাতির ইজ্জত রক্ষা করতে। তারা হিরাক্লিয়াসের বেতনভোগী  সৈন্যদলের ন্যায় নয় , তারা জাতির প্রাণ,তারা  আরবের মুজাহিদ দল । তাদের পাশে এসে দাঁড়ালেন মুসলিম ললনাগণ। তারা নিলেন সেবার ব্রত। তারা পানি যোগাতে লাগলেন শ্রান্ত  সেনাদলকে। উৎসাহ বাক্যের মাধ্যমে তাদের বুকে সঞ্চার করতে লাগলেন অফুরন্ত প্রেরণা। তদুপরি আহত সেনাদেরকে সেবার মাধ্যমে সুস্থ করে তুলতে লাগলেন

 এ বীর নারীগণ সৈন্যদের বারবার সতর্ক করে দিয়ে দৃঢ় কণ্ঠে ঘোষণা করলেন, হে মুজাহিদ সিপাহী দল! তোমরা কখনো পালাবার চেষ্টা করো না। যুদ্ধক্ষেত্রে সংগ্রাম করে জীবন বিসর্জন দেবে। প্রাণ  ভয়ে  ভীত হয়ে পালাবার পথ খুঁজলে  আমরা প্রস্তুর নিক্ষেপ করে তোমাদের সমূলে ধ্বংস করে দিব।জীবনপণ করে যুদ্ধ করলে, মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন তোমাদের কে জয়ী করবেন

 2 লক্ষ 40 হাজার খ্রিস্টান সৈন্যদলের সঙ্গে মাত্র 60 হাজার মুজাহিদ সেনা যুদ্ধে লিপ্ত হল। আর্তের চিৎকার, ঘোড়র  

হ্রেষা ধ্বনি, অস্ত্রের ঝনাৎকার , মুমূর্ষর কাতর স্বর সব কিছু মিলে একটা অনৈসর্গিক দৃশ্যের সৃষ্টি হল

যুদ্ধ অবসানে দেখা গেল ক্রিস্টান সেনা ছত্রভঙ্গ হয়ে পলায়ন করতে লাগল। সমবেত মুসলিম সৈন্যেরআল্লাহু আকবার’  ধ্বনিতে চারিদিকে আকাশ বাতাস মুখরিত হয়ে উঠেছে। মুসলমানেরা যুদ্ধে জয়লাভ করলেন 

 


0 Comments

আমার ব্লগ তালিকা