হযরত আবু বকর (রাঃ) কোরআন এবং হাদিস সংগ্রহ!


পবিত্র কোরআন সংগ্রহ

 হযরত আবু বকর (রাঃ) এর ইসলামের খেদমতের অন্ত ছিল না। পবিত্র কোরআনের কালাম সংগ্রহ ও তা সুসংবদ্ধ করন তার জীবনের প্রধান কীর্তি এবং ইসলামের প্রতি শ্রেষ্ঠ খেদমত  ছিল

  রাসূলে কারীম (সঃ)  এর উপরে একত্রে কোরআন নাজিল হয়  নাই। দীর্ঘ 23 বছর ধরে পর্যায়ক্রমে কোরআন নাযিল হয়েছে

 হযরত জিবরাঈল (আঃ) যখন আল্লাহর তরফ থেকে ওহী অর্থাৎ কুরআন পাকের বিভিন্ন কালাম নিয়ে আগমন করতেন, রাসূলে কারীম (সঃ)  তখনই তা সাহাবায়ে  কেরামকে শুনিয়ে দিতেন এবং তাহারা সকলে সাথে সাথে মুখস্ত করে ফেলতেন। ইহা ছাড়া আরও এক ব্যবস্থা ছিল। কতিপয় লেখাপড়া জানা সাহাবী ও কাতেবে ওহী কোন তার সাথে সাথে পাথরখণ্ড অথবা পশু চর্মসমূহে লিখে রাখতেন। এই সমস্ত কাতেবে ওহীর মধ্যে সর্বপ্রধান উল্লেখযোগ্য ব্যক্তি ছিলেন হযরত যায়েদ ইবনে সাবেত( রাঃ) । যে কোন আয়াত নাজিল হওয়া মাত্রই  অন্যান্য সাহাবীগণ  তো লিখতেনই, তিনিও প্রত্যেকটি আয়াত অতি সতর্কতার সাথে লিপিবদ্ধ করে রাখতেন

 ছাগল , ভেড়া ও উট এর চর্ম, হাড্ডি এবং শুষ্ক বৃক্ষ পত্র সমূহে  লেখা হতো। আয়ত লিখিত বস্তুগুলি  স্বয়ং  হযরত রাসূলে কারীম (সঃ)  এর কাছে  গচ্ছিত থাকতো।   একবার এক যুদ্ধে( ইয়ামামার যুদ্ধ)  বহু মুসলমান শাহাদাত বরণ করলেনতাতে কোরআনের হাফেজ এর সংখ্যাই ছিল বেশি। উক্ত যুদ্ধের পর হযরত ওমর(রাঃ)  খলিফা আবু বকর (রাঃ)  লক্ষ করে বলেন, মাননীয় খলিফা! এই যুদ্ধে যে রূপ আমাদের বহু সংখ্যক কোরআনে হাফেজ  শহীদ হয়েছেন ভবিষ্যতেও  হতে থাকে তাহলে আমাদের পক্ষে কোরআন   সংরক্ষণ করা বড়ই  মুশকিল হয়ে পড়তে পারে।  কেননা কোরআনের লিখিত বস্তুগুলিও তো  হারিয়ে বা নষ্ট হয়ে যেতে পারে। সুতরাং আমার মতে, পবিত্র কোরআনের শব্দগুলি সূরা ও আয়াত  শ্রেণিবদ্ধ ভাবে একত্রিত করে লিখে রাখার জন্য আপনার কিছু সংখ্যক লোক নিয়োগের ব্যবস্থা করা একান্ত আবশ্যক

 হযরত আবু বকর (রাঃ) হযরত ওমর(রাঃ)  এই প্রস্তাব মনোযোগ সহকারে  শুনলেন। কিন্তু সেটা কার্যকর করতে গিয়ে প্রথমতঃ তিনি  একটু ইতস্তত করছিলেন। কেননা  যে কোন কারনেই হোক হযরত রাসূলে কারীম (সঃ) জীবিত থাকাকালে যে কাজ করার সুস্পষ্ট কোন নির্দেশ দিয়ে যান নাই, সে কাজ করার কোন গুনাহ  হয় নাকি এরূপ একটি আকাঙ্ক্ষা তার মনে উদয় হয়েছিল। কিন্তু পরে তিনি বিশেষ ভাবে চিন্তা-ভাবনা করে হযরত ওমর(রাঃ) এর কথার যুক্তি, সতর্কতাঃ এবং প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করে এই গুরুত্বপূর্ণ কাজে হাত দিয়েছিলেন। তিনি হযরত রাসূলে কারীম(সঃ)  এর ব্যক্তিগত কুরআন লেখক হযরত ইবনে সাবেত (রাঃ) কে ডেকে এ কাজের দায়িত্ব সম্বন্ধে সচেতন করে দিলেন এবং কুরআন পাকের সূরা ও আয়াত গুলো একত্রিত করে লিখতে আদেশ দিলেন

 এই নির্দেশে জায়েদ অগোছালো  আয়াতগুলো  বহু পরিশ্রমে  সুশৃংখলভাবে  আবু বকর  (রাঃ) এর হাতে অর্পণ করলেন। হযরত আবু বকর (রাঃ)  নিজেও একজন কুরআনের হাফেজ ছিলেন

 

তিনি নিজের মুখস্ত কোরআনের সাথে  জায়েদ (রাঃ) লেখাগুলো উত্তমরূপে মিলিয়ে দেখলেন এবং আরো কতিপয় কোরআনে হাফেজদেরকে  উহা মিলিয়ে দেখতে আদেশ করলেন । এভাবে হযরত ওমর (রাঃ)  এর প্রস্তাব এবং হযরত আবু বকর (রাঃ)  এর নির্দেশ ও প্রচেষ্টায় সমগ্র কুরআন পাক একত্রিত করে সুশৃংখল ও সুসংবদ্ধ করে লেখা হলো

 হযরত আবু বকর (রাঃ)  এর জীবিত কালে সেটা তার নিকটই রক্ষিত ছিল। মৃত্যুর পূর্বে হযরত ওমর (রাঃ)  এর নিকট সোপর্দ করে গেলেন। তার জীবিত কাল পর্যন্ত উহা তার নিকট সুরক্ষিত ছিল। তার মৃত্যুর পর যখন হযরত  ওসমান (রাঃ)  খলিফা হলেন, তখন তিনি উক্ত সুরক্ষিত কোরআনের বহু কপি লিখে বিভিন্ন দেশে প্রেরণ করেছিলেন। 

 এভাবে আল্লাহর মসজিদ ইসলামের   পবিত্র ধর্মগ্রন্থ  আল-কোরআনে ব্যবস্থা হল। এটা হযরত আবু বকর (রাঃ)  এর একটা কর্তৃত্বের বিষয়। অন্যদিকে গর্বের বিষয় ছিল

 

 আবু বকর  (রাঃ)  এর হাদীস বর্ণনা

 একথায়  কোন  দ্বিমতের  অবকাশ নাই যে, হযরত আবু বকর (রাঃ)  সর্বপ্রথম ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন। তাছাড়া তিনি  মহানবী হযরত মোহাম্মদ (সঃ)এর অন্তরঙ্গ বন্ধুও ছিলেন। সুখে- দুঃখে, বিপদে- সব সময়  তিনি তার সান্নিধ্যে ও সাহচর্যে ছিলেন। হযরত রাসূলে কারীম(সঃ)  এর আদেশ- নিষেধ, কথাবার্তা ও  কাজকর্ম দেখবার ও   শুনবার সুযোগ যতটা হয়েছিল অনেকেরই তা হয়নি। এই সমস্ত কারণের ভিত্তিতে বলা চলে যে, হযরত আবু বকর (রাঃ)  এর পক্ষে সর্বাপেক্ষা বেশি হাদিস বর্ণনাকারীদের মধ্যে তার স্থান নেই। এমনকি  একশ্রেণীর লোকদের মধ্যে তার স্থান সকলের নিচে।  ইহার কারণ জানতে অনেকেরই মনে আগ্রহ এবং নানা ধরনের প্রশ্ন জাগ্রত হতে পারে

 অল্প কথায় উহার কারণ হিসেবে বলা যেতে পারে- তিনি অত্যন্ত  পরহেজগারী তথা ধর্মভীরুতা এবং মিথ্যাভীতির জন্যেই  তিনি হাদিস বর্ণনা করেন নাই। তিনি মনে করতেন যে, হযরত রাসূলে কারীম(সঃ)  এর নামে হাদিস বর্ণনা করা হলে যদি কোন ক্রমে তার হাদিস না হয়, তবে পরকালে তিনি আল্লাহর দরবারে এ সম্পর্কে কিভাবে জবাব দিবেন। একটি বিশেষ ঘটনার মাধ্যমে হযরত আবু বকর (রাঃ) এর এ ঘটনার প্রমাণ মিলবে

 

উম্মুল মু'মিনীন হযরত আয়িশা (রাঃ)  বলেন যে, আমার পিতা হযরত আবু বকর (রাঃ)  পাঁচ শতাধিক হাদিস বিরাট পান্ডুলিপি প্রস্তুত করেছিলেন। আমি একদা রাত্রিতে তাকে অত্যন্ত অস্থির অবস্থায় দেখতে পেলাম।  তিনি একেবারে ছটফট করছেন এবং বারবার  পার্শ্ব পরিবর্তন করছেন। পিতাজির  এর অবস্থা দর্শন করে আমি অত্যন্ত অস্বস্তি বোধ করলাম

 পরদিন প্রত্যুষে আমি তাকে গতরাতের  অবস্থা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি তার কোন জবাব না দিয়ে বললেনমা  আয়েশা! আমি তোমার নিকট যে হাদীসের পাণ্ডুলিপিটি রেখেছিলাম তা আমার নিকট নিয়ে আসো। মা  আয়েশা বললেন, আমি উক্ত হাদীসের পান্ডুলিপিটি পিতাজির হাতে দিলাম।  তিনি সেটা হাতে নিয়েই অগ্নিসংযোগ করে পাণ্ডুলিপিটি জ্বালিয়ে ফেললেন, ইহাতে আমি যারপরনাই  বিস্মৃত হয়ে তাকে জিজ্ঞেস করলাম, আব্বাজান! আপনি এটা কি করলেন? আপনি বহুদিন কঠিন পরিশ্রম করে যে জিনিসটি প্রস্তুত করেছিলেন হঠাৎ এভাবে ফেললেন কেন? উত্তরে তিনি বললেন, মা! কোন কারণ ব্যতীত আমি করি নাই। আমার লিখিত হাদিসগুলো মধ্যে কতগুলি রয়েছে যা আমি রাসূলে কারীম(সঃ) কে  বলতে শুনিনি। অন্যের কাছ থেকে শ্রবণ করে লিখেছিলাম। এখন আমার মনে সন্দেহ জেগেছে যে, অন্যের নিকট থেকে শ্রুত হাদীসগুলোর  আমি নিজ কানে শ্রবণ করেছি আমার লেখার সাথে তার সম্পূর্ণ মিল নাও থাকতে পারে। অথচ লোকজন আমার লিখিত হাদিস গুলো দেখে মনে করবে যে, ইহা রাসুলুল্লাহ(সঃ)  এর জবানি হাদিস, তখন যা রাসুলুল্লাহ(সঃ) এর জবানি হাদিস নয় তা আমারই লেখার কারণে লোকজন সম্পূর্ণ সঠিক ও নির্ভুল হাদিস বলে ভাববার ও তদনুযায়ী আমল করবার দায়িত্ব আমার উপরে পড়বে নাকি ?

 

আমি দুনিয়া থেকে বিদায় গ্রহণ করার পরে আমার লিখিত এই হাদিসগুলো থেকেই যাবে এবং সর্বত্র প্রচলিত হবে। আমার মনে  আশঙ্কা হচ্ছে যে, এ হাদীস গুলির মধ্যে দু-একটি হাদিসও এরূপ থাকে যাহা সত্যই   রাসুলুল্লাহ(সঃ)  এর হাদিস নহে  বা  তার হাদিস  হলেও সঠিক ভাবে  উহা বর্ণিত হয় নাই।  অথবা বর্ণনায়  এদিক- সেদিক হয়েছে। তবে সেই ত্রুটিপূর্ণ হাদীসকে সঠিক হাদিস বলে বর্ণনা করার যাবতীয় দায়িত্ব আমার উপর বর্তাবে এবং আমি অত্যন্ত কঠিন গুনাহে লিপ্ত হয়ে পড়বো । গুনাহার ভয়েই  আমার কঠিন পরিশ্রমের দ্বারা সংগ্রহীত  সমস্ত হাদিস গুলো বিনষ্ট করে ফেললাম

এভাবেই হযরত আবু বকর (রাঃ) হাদিস বর্ণনা করা বা সংগ্রহ করা থেকে তিনি বিরত থেকেছেন।

ভুল ত্রুটি সংশোধন যোগ্য



 ধন্যবাদ

 

 


0 Comments

আমার ব্লগ তালিকা