Rule of Hazrat Abu Bakr (R)



 প্রথম খলিফা হযরত আবু বকর (রাঃ)  হযরত রাসূলে কারীম (সঃ)  এর ইন্তেকালের পরে দুর্যোগের ঘনঘটা আচ্ছন্ন ইসলামকে রক্ষা করা ও মুসলিম বৃন্দকে সঠিক পথে পরিচালিত এবং নিয়ন্ত্রিত করার জন্য খেলাফতের আসনে অধিষ্ঠিত হয়েছিলেন।  তার খেলাফত কাল ছিল দুই বছর। এ  স্বল্প সময়ের মধ্যে যেরুপ  যোগ্যতা, বিচক্ষণতা, দূরদর্শিতা, অবিচলতা  ও মনোবলের দারা ইসলামকে ভয়াবহ দুর্যোগ এবং কঠিন বিপদ থেকে রক্ষা করেছিলেন দুনিয়ার ইতিহাসে  সত্যিই এর তুলনা বিরল।  হযরত আবু বকর (রাঃ)  এর রাজ্য শাসন ব্যবস্থা ছিল প্রধানত গণতন্ত্র ভিত্তিক। তিনি নিজে যেমন গণতন্ত্র তথা জনসাধারণের  মতে  খেলাফতে আসনে আসীন হয়েছিলেন জনগণকে শাসন এবং প্রতিপালকের ব্যাপারেও তিনি তেমনি জনগণের ইচ্ছা অনুসারে ব্যবস্থা গ্রহণ করেছিলেন এ গণতন্ত্রের মর্যাদার  প্রতিদিনই মৃত্যুর পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত  প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন। 


তিনি জীবিত অবস্থায়ই  তার পরবর্তী খলিফার  নির্ধারিত করে যাবার জন্য নিজে  হযরত ওমর (রাঃ)  এর অনুকূলে প্রদান  করলেন।  অতঃপর তিনি জনগণের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিবৃন্দ  তথা প্রধান প্রধান সাহাবীদেরকে  ডেকে তাদের কাছে নিজের মত ব্যক্ত করে এ ব্যাপারে তাদের মতামত জিজ্ঞাসা করলেন। তারা তার মতকে সমর্থন করলেন তিনি হযরত ওমর (রাঃ)  কে খলিফা করার জন্য জনসাধারণকে ওসিয়ত করে গেলেন। হযরত আবু বকর (রাঃ)  নিজে বিচক্ষণ। যোগ্যতাসম্পন্ন এবং অনেকেরই অপেক্ষা অধিক জ্ঞানী হওয়া সত্বেও দেশ শাসন ও কঠিন সমস্যা সমাধানের জন্য একটি পরামর্শ সভা গঠন করেছিলেন।  প্রধান প্রধান ও  প্রবীণ এবং বুজুর্গ সাহাবীরা  এ পরামর্শ সভার সদস্য ছিলেন।   কোন কঠিন, জটিল ও   গুরুত্বপূর্ণ  কার্যসময়ে  হস্তক্ষেপ করার সময় তিনি সর্বদাই এ পরামর্শ সভায়  জ্ঞানী এবং অভিজ্ঞদের সাথে পরামর্শ  করে নিতেন। 


দেশ শাসনের সুবিধার জন্য তিনি সমগ্র আরব দেশকে কয়েকটি প্রদেশে বিভক্ত করে প্রত্যেকটি দেশের জন্য একেকজন শাসনকর্তা বা প্রাদেশিক গভর্নর নিযুক্ত করেছিলেন । এ সকল শাসনকর্তার উপর নিজ নিজ প্রবেশ বাসীর প্রতি ইসলামী শরীয়তের আদেশ জারি ও বিচারব্যবস্থার যাবতীয় দায়িত্ব অর্পিত ছিল। 


 হযরত আবু বকর(রাঃ)  এর খেলাফতকালে মুসলিম সাম্রাজ্যের সর্বপ্রধান বিচারক বা কাজীর পদে নিযুক্ত ছিলেন হযরত ওমর(রাঃ) ।  এছাড়া শাসন ব্যবস্থার সুবিধার জন্য আরো নানা পদে বিভিন্ন লোককে। এসমস্ত নিয়োগ করার ব্যাপারে কোন লোক কোন বিষয়ে বেশি অভিজ্ঞ প্রথমে তার দেখেশুনে নিতেন। 

কোন লোককে কোন পদে নিয়োগ করে দায়িত্ব অর্পণ করার পূর্বে তিনি নিজে তাকে কাছে ডেকে জনসাধারণের সাথে সদ্ব্যবহার ও নম্রতা প্রদর্শনের প্রতি আধা প্রতিশ্রুতি আদায় করে নিতেন। যদি তারা প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করে খলিফার আদেশ এর বিপরীত কোন কাজ করত, করতো তাহলে সাথে সাথে তিনি তাদেরকে  ডেকে কঠোর দণ্ডে দণ্ডিত করতেন।  আর যদি কারো অজ্ঞাতসারে কোন ঘটে যেত, তবে তিনি তাকে ডেকে এনে ভবিষ্যতের জন্য সাবধান ও সতর্ক করে দিয়ে তাকে ক্ষমা করে দিতেন। 

হযরত আবু বকর (রাঃ)  এর সময় মুসলমানগন দেশ ও বিদেশে ছোট-বড় বহু যুদ্ধে লিপ্ত হলে যুদ্ধ সংক্রান্ত নীতিতে তিনি অবিকল হযরত রাসূলে কারীম(সঃ)  এর নীতিরই অনুসরণ করেছিলেন। হযরত রাসূলে কারীম(সঃ) এর কোন সেনাবাহিনী ছিল না। আরবের প্রত্যেক লোকই যুদ্ধ করতে জানতো।  প্রয়োজনে সবল সক্ষম সকল  মুসলিমেই  যুদ্ধে যোগদান করতেন।

 হযরত আবু বকর (রাঃ)  এর সময় পৃথক কোন সেনাবাহিনীর ছিল না।  যখন যুদ্ধের আহ্বান এসেছে মুসলমানগন ঘর-সংসার ও পারিবারিক যাবতীয় কাজ ফেলে রেখে খলিফার আহবানে ও ইসলামের খাতিরে যুদ্ধ করার জন্য ছুটে আসতেন । 


অবশ্য কোন কোন বৃহৎ যুদ্ধের পূর্বে যুদ্ধে যোগদানকারী মুসলমানগণকে একত্রিত হওয়ার পর খলিফা তাদেরকে যুদ্ধনীতি সম্পর্কের নানা রূপ উপদেশাধি প্রদান করতেন এবং এ বিষয়ে তাদেরকে যোগ্য করে তোলার জন্য হয়তো কখনও কখনও একত্রিত করে কিছুদিন রাজধানী মদিনায় রেখে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতেন । সেনাপতি নির্বাচনকালে বংশ ও গোত্রের অভিজাত্য এবং  সামাজিক মর্যাদার প্রতি গুরুত্ব না দিয়ে ইসলামের দৃষ্টিতে যোগ্য, বুজুর্গ এবং সামরিক  যোগ্যতার ভিত্তিতে নিয়োগপত্র প্রদান করা হতো।   এরূপ ব্যবস্থা করতে গিয়ে দেখা যেত অনেক সামাজিক মর্যাদাশীল  ব্যক্তি সেনাপতি হতে পারত না।  বরং প্রাক ইসলামী যুগে তারা  ক্রীতদাস ছিলেন। 


এ সকল সেনাপতির অধীনে মক্কার অভিজাত  গোত্রে কুরাইশ কবিলার প্রধান প্রধান এবং প্রভাবশালী সাহাবীদেরকেও  সাধারণ সৈন্য  হিসেবে যোগ দিতে হতো। তাদের প্রতি সেনাপতির আনুগত্য ও তার যেকোনো নির্দেশের প্রতি শ্রদ্ধা এবং সম্মান প্রদানের জন্য কঠোর নির্দেশ ছিল।  আর এ  নেট প্রতিটি যথাযথভাবে  পালিত হতো।

 হযরত রাসূলে কারীম (সঃ)  এর প্রথম স্থলাভিষিক্ত   হিসেবে খলিফা   হযরত আবু বকর (রাঃ) এর প্রথম এবং প্রধান লক্ষ্য ছিল ইসলাম প্রচার করা ও মুসলমানদের মধ্যে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখা। আগেই উল্লেখ করেছি যে, রাসূলে কারীম (সঃ) রাজ্য বিস্তার ও দেশ শাসন করতে আসেননি এবং তার এ  উদ্দেশ্য ছিল না। দেশ-বিদেশে তিনি মুসলিম বাহিনী প্রেরণ করতেন শুধু ইসলাম ধর্ম প্রচার করতে। এ লক্ষ্যে স্থির থেকেই তিনি জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করে গিয়েছেন।

তার  নিযুক্ত  নিজস্ব সেনাপতিদের প্রতি বিশেষ নির্দেশ ছিল যে, শত্রুদের কাছে গিয়ে তোমরা সর্বপ্রথম তাদেরকে ইসলাম গ্রহণ করার জন্য অনুরোধ করবে।  যদি তারা তাতে সম্মত না  হয়ে  বিরূপ আচরণ প্রদর্শন করে তবে তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে। আর যদি সে তার ইসলাম গ্রহণ করে তবে তাদের সাথে তোমাদের কোন শত্রুতা নাই,  এ কথা স্মরণ রেখে তাদের সাথে  মিত্রতা  সুলভ আচরণ করবে । 

ইরাক প্রদেশের খ্রীষ্টানগণ হযরত আবু বকর(রাঃ)  এর সময় সেনাপতি মুসান্নার চেষ্টায় ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত হয়েছিলেন। এছাড়া একই সময় মহাবীর  খালিদ  বিন ওয়ালিদ (রাঃ)  কর্তৃকও  ইরানের বহুলোক ইসলামের  ছায়ায় এসেছিল ।  একবার কোন একটি বিশেষ গোত্রের লোক ইসলাম ও মুসলমানদের সাথে ভয়ংকর শত্রুতা সুলভ  আচরণ করায় খলিফা খালিদ বিন ওয়ালিদ(রাঃ)  এর প্রতি তাদের কে চরম দণ্ড প্রদান করতে নির্দেশ দিলেন।কিন্তু উক্ত নির্দেশ পৌঁছবার পূর্বেই খালিদ  বিন ওয়ালিদ(রাঃ) ক্ষমা প্রার্থনা এবং ইসলাম গ্রহণ করার প্রতিশ্রুতিতে তাদেরকে রেহাই প্রদান করেছিলেন।

এ খবর খলিফার কাছে পৌঁছার পর অনেকেরই আশঙ্কা করেছিলেন যে খালিদ বিন ওয়ালিদ(রাঃ) এরূপ অবস্থা  গ্রহণে না জানি খলীফা তার নিকট  কৈফিয়ৎ  করে বসেন।  হয়তো  খালিদ বিন ওয়ালিদ (রাঃ) কে এ জন্য সেনাপতির পদ থেকে বাদ দিতে পারেন।  কিন্তু দেখা গেল সম্পূর্ণ বিপরীত অবস্থা। খালিদ বিন ওয়ালিদ(রাঃ) এর উল্লেখিত  রূপ ব্যবস্থা গ্রহণে কোনরূপ অসন্তুষ্টি প্রকাশ তো দূরের কথা  বরং খালিদ বিন ওয়ালিদ(রাঃ) এর প্রতি তিনি অত্যন্ত সন্তুষ্ট হয়ে বললেন, খালিদের প্রতি অশেষ ধন্যবাদ এজন্য যে, ইসলামের নীতি পালন করতে কোনরূপ দ্বিধা-সংকোচ করে নাই।  ইসলামের নীতি এবং রাসূলে কারীম (সঃ)  এর নির্দেশেই কেউ যখন অনুতপ্ত হয়ে ক্ষমা প্রার্থনা করে এবং অন্তর  দ্বারা ইসলাম গ্রহণ করে তার সাথে মুসলমানদের কোনরূপ শত্রুতা থাকেনা। 

 হযরত আবু বকর (রাঃ) হুজুর (সঃ) এর  আরাধ্য এবং ওয়াদাকৃত  কাজ সমূহ ( যা তিনি জীবিত অবস্থায় করে যেতে পারেননি) সম্পন্ন করেছিলেন।

হযরত রাসূলে কারীম (সঃ)  এর পরিবার - পরিজন, ঘনিষ্ঠ আত্মীয়-স্বজন, বিশেষতঃ  উম্মাহাতুল মুমিনীন মর্যাদা, সম্মান, দাবি-দাওয়া, সুখ- শান্তি  বিধান তত্ত্বাবধানের  দিকে সর্বদা খলিফা সতর্ক ও সজাগ   দৃষ্টি ছিল। 

একবার হযরত(রাঃ) এর  এর সাথে  এ প্রসঙ্গে তিনি বলেছিলেন, আমি হযরত রাসূলে কারীম(সঃ)  এর আত্মীয়-স্বজনদের সাথে উত্তম ব্যবহার করা আমার নিজের আত্মীয় স্বজনদের সাথে উত্তম ব্যবহার করা অপেক্ষা বেশি প্রয়োজন মনে করি। এ কথা শুধু মুখে নয়, তার প্রমাণ করে দেখিয়েছিলেন।

হযরত আবু বকর (রাঃ) এর শাসন ব্যবস্থা, বর্তমান  প্রত্যেকটি দেশের প্রধানদের মডেল হিসেবে গ্রহণ করা উচিত


  ভুল ত্রুটি সংশোধন যোগ্য!




 "ধন্যবাদ"


0 Comments

আমার ব্লগ তালিকা